May 3, 2020

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষক প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম

খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। একটা কণ্টকাকীর্ণ আলোচনা ভিডিও শুনে শুনে না বুঝে তার আংশিক লিখে ফেলেছি। এ ট্রেনিং অবশ্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেয়েছি। কতশত ক্লাসে চোখ মুখ খিচে লিখে যেতে হয়েছে! অবশ্য এই বক্তার সমমাত্রার বাগ্মীতা নেই অন্তত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো। থাকলেও সেটা দুই যুগে একটা পাওয়ার দুর্ভাগ্য কি মতান্তরে সৌভাগ্য হোক, ওসব বিশ্বাস করানোর কিংবা আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের আলোচনার আংশিক লিখিত রূপ:

বাংলাদেশে 'বিশ্ববিদ্যালয়' নামে যা আছে, এটা তো আমরা নিজেরা তৈরি করি নাই। আমি মাঝে মাঝে বলি যে, একটা অদ্ভূত ব্যাপার কমার্স ফ্যাকাল্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বেইচা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। সম্প্রতি একটা কথাবার্তা হচ্ছে নাইট শিফট নিয়ে, ইভনিং ক্লাস নিয়ে। সেখানে যদিও রেগুলার ছাত্র ভর্তি করায় ১২০০ জন। আর ইভনিং-এ ভর্তি করায় ৩৬০০ জন!

মানে ব্যবসাটা ভালোই জমেছে। আমি প্রায়শই বলি কমার্স ফ্যাকাল্টি অন্যায্যভাবে এই ব্যবসাটা করছে। কারণ, সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির নাম বেচতেছে— যে নাম তৈরি করায় তার কোনো ভূমিকা নাই। ও ওই নামটা বেচতেছে। নাম করেছে অন্যরা— আর্টস, সোশ্যাল সাইন্স, সাইন্স— এদের কিছু কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে একটু নামধাম ইউনিভার্সিটির জন্য করেছে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির তো আসলে কোনো প্রকার এলিটিজম নাই, কোনো হায়ার ক্লাসের লোক তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য ছোটবেলা থেকে এই স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় না যে, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করব। একটাও না। কারণ কী? কারণ,
ওর ইউনিভার্সিটি হিসেবে কোনো মেকানিজম নাই। তাইলে ইউনিভার্সিটিটা আছে কেন? কারণ, বিদেশে আছে। Exactly that!

মানে আমাকে ইউনিভার্সিটির মাস্টার হিসেবে আমাদের সোসাইটির কোনো লোক যদি সম্মান করে থাকে, সেটা একমাত্র এই কারণে করে থাকে যে সে ইউরোপ আমেরিকায় দেখেছে— ইউনিভার্সিটির মাস্টারদের সম্মান করতে হয়। আর তো কোনো কারণ নাই। আমি তো আমার সমাজের জন্য কিছুই করি নাই।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল প্রোডাকশন কী? কী গবেষণা করে সে সমাজকে দিয়েছে? কিছুই তো না। কারণ রাষ্ট্রেরই দরকার নেই। রাষ্ট্র কখনো তার কাছে চায়ই নাই— তুই আমাকে এটা করে দে। সারাবিশ্বে তো তাই-ই হয়। আপনারা জানেন, কথাবার্তা শুনেন, অমুক মাস্টার খুবই আপার লেভেলের। প্রমাণ কী? বলে— ও বিরাট প্রজেক্ট নিয়া আসে।

এই প্রজেক্ট নিয়া আসার মানে বুঝেন তো? এটার একমাত্র কারণ হল, রাষ্ট্র এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ওর কাছে বলে যে, তুই আমাকে এই কাজটা করে আমাকে কিছু ফল দে। রাষ্ট্র তো ইউনিভার্সিটির কাছে চায় নাই যে, তুই আমাকে একটু বল— আমি এডুকেশনে আগামী ১০ বছর কী কী প্রকল্প নিব?

আপনারা বরাবরই দেখবেন যে, বিরাট বিরাট নিউজ হয়ে যাচ্ছে— প্রাইমারি স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, হাই স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, বই চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে! কোত্থেকে বেরোয় তাহলে এই জ্ঞান?
এই হারামজাদারা এই জ্ঞান কোত্থেকে পেল? ওরা ছয়শ সাতশ মিলে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ টমন কইরা আইসা বলে যে ওটা চেঞ্জ করে দাও!
ওই দেশে (এমন দেশে) কি ইউনিভার্সিটি বিকশিত হয়?

ইউনিভার্সিটির কাছে তো চাইতে হবে রাষ্ট্রর, টাকা দিবে, যে তুই আমাকে বলে দে— আগামী ১০ বছরে আমি শিক্ষাখাতে কী কী পরিবর্তন আনব? এর নামই তো গবেষণা! এর নামই তো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। তো ওটা নাই!

তারপরও লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে এবং আমি জানি বেশ ৩২ দন্ত বিকাশ করে লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দারুণ হেসে শ্লাঘা অনুভব করে। কোত্থেকে আসে এই শ্লাঘা? বিদেশ থেকে আসে। কারণ, লোকে জানে আইনস্টাইন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত, লোকে জানে নিউটন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত। আমিও ইউনিভার্সিটির মাস্টার, আইনস্টাইনও মাস্টার। তাই না? লোকে ক্যাটাগরি করে এই লোক যেহেতু মাস্টার ফলে ওকে একটা সালাম দেয়া যেতে পারে।

আস্ত ভিডিও: www.youtube.com/watch?v=A9xEt914UaI
লিখিত রূপের ভিডিও: www.fb.com/Arif1415/videos/3139000702789322/

Apr 30, 2020

রঙিন সেদিনগুলো

Image may contain: sky, cloud, twilight, outdoor and nature

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর 
ব্যস্ত মানুষজন 
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।

উড়ছে পাখি, উড়ছে মেঘ
উড়ছে হাওয়ায় তুলো
উড়ে বেড়ায় চোখের ভেতর
রঙিন সেদিনগুলো।

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর
ব্যস্ত মানুষজন
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।

ইটের পরে ইটে গড়া
হাজার অটালিকা
স্বপ্ন আমার দূরের আকাশ
মিথ্যে মরীচিকা।

উড়ছে পাখি, উড়ছে মেঘ
উড়ছে হাওয়ায় তুলো
উড়ে বেড়ায় চোখের ভেতর
রঙিন সেদিনগুলো।

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর
ব্যস্ত মানুষজন
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।


ছায়াছবি: নিরন্তর 
হুমায়ূন আহমেদের জনম জনম উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। 


Jan 30, 2020

আঘুণ মাসের খাতা

হবিগঞ্জের জমিন ধরে ছুটি, বায়ে ঝরে পড়ে ঘোলাটে বিকেল...
পড়ন্ত সে কোমল বিকেলের সামনে সমানে ধুলিধূসরিত আঘুণী ধানখেত
মেঘ নাই, আকাশের নীল নাই, শুধু মাঠে কাটা ধানের শুকনো গোছার সমুদ্র
আহারে শূন্যতা! কী বিশালত্ব তার! কী চাউনি!
সে শুকনো মাঠে, কতগুলো ছেলের ক্রিকেটে মাতে শৈশব, নারকেলের ডাগ্যায় চলে ব্যাটিং
দিগন্ত জোড়া বিস্তর প্রান্তর মেলা বয়েসী উল্লাসে খেলে খালি পায়ের হাফপ্যান্ট কমান্ডোর দল
সে ছোট খেলুড়ের দল না জানি গড়া ক্রোশব্যাপী কত প্রতিবেশী গুনে
আমি জানি, এ শৈশবেরাও যাবে জাদুঘরে, শিগগির, কারণ বাকি পৃথিবীর শিশুরা কড়া যুবক হবে বলে তখনো হয়ত পড়ছে কষে কাগজে কলম-পেন্সিল চষে।
মনে পড়ে প্রমথ চৌধুরীর একখানি চরণ— শৈশবে যে শিশু ছিল না, যৌবনে সে যুবক হতে পারে না।
তবু অসম্ভবের সাধনা চলে সাধন করার চেষ্টায়, রূপকথার দেশে— শিক্ষায়।
ঘাস নাই, গরু নাই, রাখাল নাই, নাই চাষাদের আনাগোনাও
ভীষণ ঘূর্ণাবর্তী পৃথিবীর বুকেও কত এমন থমকে থাকা বিশ্রান্ত দুনিয়ার জানালা খোলা
আইল মেলে দিয়ে ন্যাড়া ধানখেত টুকরো টুকরো, কিছু নেই বাড়তি! তবু কিছু চাই না!
এর মাঝে প্রায়ই দীঘল পথ বয়ে গেছে যত দূর গিয়ে দিগন্ত ছাপায়
দুধারে মরাঘাসের সে দীঘল পথের সরু শাদা দাগ কেটে কোনো বাবার সাংহাই-চায়না সাইকেল ছুটে চলে গোধুলীর দিকে...
ফুলহাতা মলিন শার্ট গতরে, লুঙ্গি হাওয়ায় ফুলে এবড়ো খেবড়ো মাটির হেলকি দুলকি চলুনি—
আহা রে চাষার অবলা দিনগুলি! কত সহজ সাবলীলে অমনি চলে অস্তাচলে।
আহা রে আমার ধানখেতের মেঠোপথ! তুই কেন আরো ধানখেত গড়ালি না?
সেদিন কি হাট-বার? না মনে হয়। কাঁধে পাত্তি-ঝোলানো হাটুরে তো কেউ দেখা দিল না!
কখনো সখনো নেশা ভাঙে দৃষ্টির— মাঠ ধরে গেঁথে গেঁথে টানা তারের খাম্বা। দূরে যায়, কাছে আসে। ফাঁকে ফাঁকে ধরা দিয়ে যায় থোকা থোকা বাড়ি-দ্বীপ।
সাতখান-ছয়খান আইলের বিরতিতে একখান করে পাড়া— সযতনে আঙিনাগুলো আড়াল করে ঘিরে আছে ভিনদেশী ইউক্যালিপটাস,
তালগাছ নেই, বটগাছ নেই এদেশে আর। বাবুই পাখির বাসাও বোধয় চড়ুই পাখির কবিতায়...
কখন হঠাৎ খেয়াল হয় উঁচু উঁচু গাছগুলো ডাল ছুটিয়ে সচকিতে হয়ে গেছে চুঙ্গা চুঙ্গা ইটের ভাটা...
এ নিশ্চিন্ত বিকেল দেখার জন্য কোনো পাখির দলও নাই
বিজন মাঠের পর মাঠ... বিবর্ণ আকাশের তলে হঠাৎ বিরলে
ধর্মজাল খাড়ায়ে ঝুলে নির্জন, নিস্তরঙ্গ খালের পাড়ে, কানাবগীরও ছুটি!
এই দর্শকহীন কোলহলবিহীন নীরব পসরায়, যুগ হারানো খোয়া যাওয়া স্মৃতি, নিভৃত, নির্বিকার পল্লীর
এত আয়োজন!
সবই বৃথা
যদি
আমি না থাকি।

অগ্রহায়ণের শেষ, পৌষের পয়লা দিনে করা খসড়া থেকে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ, ঢাকা থেকে সিলেটে আসার সময়। অবসরগুলো কেউ দিয়ে যাও অযতনে, সযতনে লব থুবায়ে মনমতন। কিছু কিছু শব্দ গ্রামীণ এবং লোকায়ত। এই আঘুণ মাস এলে মার কথা খুব মনে পড়ে। কখনোবা আঘুণ মাসের ছলেও মাকে মনে পড়ে। আমি আঘুণ মাসের, আমার মা— আঘুণ মাসের মা।

Oct 6, 2018

তিষ্ঠ, ক্ষণকাল

আকাশের প্রতিটি নক্ষত্রের মৃত্যু হবে
আমি দেখে যেতে পারব না।
আরো নক্ষত্রের জন্ম হবে
হয়ত কেউই ধরা দেবে না।
এ জড় বিশালত্বের মাঝে
যেটুকু সময় আমি থাকব
সেটুকুই নাকি জীবন।
অস্থির পৃথিবীর
এই ক্ষুদ্রতার মাঝে
বেজে চলে ভাঙা গড়ার
কত শত নীরব কাহন।
স্থানু হোক মন, চঞ্চল হোক জীবন।
হয়ত নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল নয়,
কিন্তু ক্রমশ ম্রিয়মান তরঙ্গের মত
উচ্ছ্বলই হল নাহয়।

Sep 13, 2018

বিশ্বপ্রকৃতি ও মানুষ: আধুনিক বিজ্ঞানের রূপরেখাবিশ্বপ্রকৃতি ও মানুষ: আধুনিক বিজ্ঞানের রূপরেখা by পার্থ ঘোষ

দাম দিলাম: 2 of 5 stars


কেন্দ্রীনবিদ, মৌলকণাবিদ, দেশকাল, বিঘ্নন, ধ্রুপদী তত্ত্ব, মহাবিক্ষোভ, সমমিতি (symmetry), কমজোর (weak force), তড়িৎ কমজোর বল, মহামিলন তত্ত্ব (GUT), দ্বিশাখীভবন— এইরকম আরো একশটা শব্দ এই বইটাকে নষ্ট করেছে। বিজ্ঞান শব্দের ঝনঝনানি চায় না, বিজ্ঞান চায় সোজাসাপ্টা, স্পষ্ট ও প্রচলিত টার্মিনেশন।
বিজ্ঞানের দর্শন হল সরলতা, বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের পোষাক পড়িয়ে দিলেই সে সুদর্শন হয়ে উঠবে না। তার নিজস্ব গুণ ও চাহিদা রয়েছে। প্রতিশব্দে ভাষার ব্যবহার স্পষ্ট হয় কিন্তু আমি দেখেছি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একই ভাষায় প্রতিশব্দ ব্যবহারে বোঝার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। একটা বিষয়কে একই ভাষার বিবিধ নামে ডাকলে বিজ্ঞানের খিঁচুনি শুরু হয়ে যাবে। তাই বিজ্ঞান পদের প্রতিশব্দের চাহিদা জানায় না। বরং ভাবের প্রতিরূপ বিজ্ঞানের চাহিদা। যেমন, Simile এবং Metaphor একই বিষয়ের উপর বহু তৈরি করা যেতে পারে। সেটা এক অর্থে ধারণাকে বিভিন্ন অনুরূপ, তুলনামূলক দৃষ্টির মাধ্যমে বুঝতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানে লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রথম উদ্দেশ্য জানানো এবং জানানো বিষয়গুলো বুঝতে পারবে এমনভাবে উপস্থাপন করা। বুঝতে গিয়ে ভাষা ঝর্ণার মত শব্দ ঝারতে থাকলে বিজ্ঞান তলিয়ে যেতে পারে।

অনেক লেখকের মত হল বাংলায় বিজ্ঞানের প্রসারে বাংলা শব্দ ব্যবহার করা। কিন্তু শব্দচয়নের ক্ষেত্রে ঘটনা সংশ্লিষ্ট থাকে, যেহেতু আবিষ্কারের জগৎটা প্রায় বিদেশী তাই বিদেশী শব্দ যখন বিদেশী বিজ্ঞানের টার্ম হিসেবে ঢুকে তখন সেটি সংশ্লিষ্টতা ধরে রাখতে পারে। কিন্তু দেশীয় ভাষায় তখন রূপান্তর করতে গিয়ে উক্ত শব্দের সমার্থক শব্দ বের করতে হয়, বহু ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দটি ভাষার সমার্থকতা বহন করে, ঘটনার সংশ্লিষ্টতা ধারণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমার মত হল, বিজ্ঞানে ভাষার রূপান্তরের কুস্তী না করে বিজ্ঞানের কাজ বাড়ানো। বিজ্ঞানে দেশীয় সৃষ্টিই পারে সবচেয়ে যুৎসই দেশীয় শব্দ উপহার দিতে। জোরটা তাই শব্দে আসুক, কিন্তু আবিষ্কারের ঝোঁক থেকে।

'৯২ সালের বই বলে '৯২ দিয়ে বিচার করতে পারছি না। কারণ, আমি পাঠক তো '৯২ এর না। আর বিজ্ঞানের চিরায়ত ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে তো আর '৯২ না '১৮ এমন কোনো ব্যাপার নেই। পড়তে পড়তে কল্পনায় আসছিল, বইটা উইকিপিডিয়ার পাতা হলে একই পাঠ ঝুরঝুরে করে দেয়া যেত। এই যে বইটার সমালোচনা করলাম এটা যতটা আশঙ্কার তার চেয়ে বেশি আশঙ্কার হল বিজ্ঞানের বিষয়ের প্রকাশিত সমসাময়িক বইগুলোও এইরকম কেবল বাংলা বাক্যের সমাহার।
আমাদের প্রকাশনীগুলো কি এখনো ছবির ব্যবস্থা করতে পারে না? লেখাসংক্রান্ত পুরো দায়িত্বই বুঝি লেখকের? প্রকাশনা কেবল বিক্রয়ের ব্যাপার দেখবে। আমাদের পাঠকরা কি সমীকরণবিমুখ? সমীকরণবিমুখ পাঠক যেমন আছে, গৎ-বিজ্ঞান বিমুখ পাঠকও আছে। কেন জানি, সমীকরণবিমুখতাই বাজারে চাউর হয়ে আছে। অথচ সমীকরণের বইগুলো যে পাঠক তৈরি করবে তারা তো গৎ লেখকের বাড়তি বাজার। গৎ তো চলবেই, কিন্তু এতে কি বেগ বাড়ে?

গুডরিডসে রিভিউ দেয়া অভ্যাস হয়ে গেছে। অন্যান্য রিভিউ দেখতে পারেন এখানে।

May 13, 2018

সাড়ে বত্রিশ ভাজাসাড়ে বত্রিশ ভাজা by বেলাল চৌধুরী

দাম দিলাম: 4 out of 5 stars





তোর জন্য আকাশ থেকে পেঁজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুণি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই!

গানটার কথা বইতে নেই। কিন্তু এক ভারী বিকেলে বই পড়তে পড়তে মনটা ভালো হয়ে গেছে। অবশ্য আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যাপার আছে, তবে বইয়ে মেঘের কথা আছে। পেঁজা মেঘের কথা আছে। হয়ত মন ভাল করার জন্য আর আর কিছু অনুরণণের বিষয়ও লুকিয়ে ছিল। কেউ যদি তার শৈশবে বা শৈশব মনের চরিত্রগুলোর সাথে পরিচিত না থাকে তবে প্রথম গল্প গোগোদা'র সঙ্গে উলুলু দেশে গল্পে সে নামগুলো পেয়ে যাবে। আমিই তো এক না-জানা লেখক পেয়ে গেছি। কমলকুমার মজুমদার ছিলেন কিনা লেখকদের লেখক সে আবার কাঠখোদাইও করত! তার খোদাই পানকৌড়ির কথা ভেবে আমিও রোমন্থন করেছি আমার কল্পনায় খোদাই করা কাঠমূর্তিগুলো কবে কবে হারিয়ে গেছে।
মন্ত্র দিয়ে তো আর কাজ হয় না, মন খোদাই তাই যথেষ্ঠ নয়।
বেলাল চৌধুরীর পড়া প্রথম বই। ভারী কোনো গল্প নয়, কিন্তু পড়ে অনেকগুলো দামী জিনিসের ইঙ্গিত পেয়েছি। সেগুলোই বের করে আনতে হবে। Christine Nostlinger এর The Cucumber King বই অবলম্বনে একটা ছবি হয়েছে। ছবিটির নাম এ বইয়ে নেই। আগেই বলেছি এটা তথ্য উপাত্ত পরিবেশনের বই নয়, কিন্তু তথ্য ছেঁকে নিয়ে রসদ বের করা যাবে ভাল ভাল। মুভিটা উদ্ধার করতে হবে ইতিহাস গলে। ছবির পরিচালক হার্ক বোম (Hark Bohm).

ওহ হ্যাঁ, "চিরকালীন গল্পের একটি" সারমর্মটা পড়ার হঠাৎ করে গল্পটি আমার কাছেও অনেক বিস্তৃত হয়ে গেল। হাসিটা দিলাম সারমর্ম পড়ে। না পড়লে খেয়াল করতাম না। অর্ধেক কমলালেবু সহজ গল্পে পুঁজিবাদের কথা বলে দিয়েছে এক ফাঁকে- সিস্টেম লোড!

আমার সকল বইয়ের রিভিউ দেখুন এখানে
[রিভিউ দিয়ে উলটে ফেলিনা, কিন্তু তাও এক একটা রিভিউ বীজের মত মনে হয়। যদি কেউ কখনো সে বীজের খোঁজ পেয়ে যায় তবে না বৃক্ষ হয়ে গেল! ফেলে রাখি, পানি পেলে না বৃক্ষসাধন হবে।]

Apr 28, 2018

অন্ধকারের একশ বছরঅন্ধকারের একশ বছর by Anisul Hoque

My rating: 5 of 5 stars


একশ বছর কত দীর্ঘ, একশ বছরের অন্ধকার কত গভীর অন্ধকারে থাকি বলে হয়ত জানি না!
এত শক্ত বিদ্রুপাত্মক গ্রন্থনা নাড়িয়ে দেয়ার মত। '৯৫ এর বই এখনো তার প্রেক্ষাপট হারায়নি, এখনো সত্য এ ব্যাপারটা কত আচানক! হতে পারত এ একশ বছর বিগত একশ বছর। কিন্তু অবাক করে দিয়ে এ একশ বছর ভবিষ্যতের জন্য ছিল। একশ বছরের অন্ধকার আলো এনে দেবে সে কথাও বলে না। এরপর যা হবে তার জন্য 'অন্ধকার'-ও হয়ত যথেষ্ঠ নয়।
বইয়ের গান এখানে গাই নি। এ বইয়ে গান গাওয়ার কিছু নেই। কৌতুকের অন্তরালে জাতির কিছু বিষাদ লুকিয়ে আছে। বিষাদ যখন লুকিয়ে থাকে তখন সে বিষ মেরে ফেলা যায় না।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ধরে নিলেও আসলে প্রশ্ন থেকে যায় এ উন্নয়ন কার জন্য। মনের দিক থেকে তো আমরা স্বাধীন হতে পারলাম না। অনেকে জানেই না, হাড়-চর্মের ভেতর যে মন আছে। সে মনের স্বাধীনতা থাকা চিন্তা করার ব্যাপার তো আরেক আরেক ধাপ স্বাধীনতার ব্যাপার। পুরোটা চোখ দিয়ে আকাশ দেখার আনন্দ বুকে ভরে নিয়ে যেন হাঁটি এ দিনের জন্য এগোই। অন্ধকার আছে, থাকবে। কিন্তু দীপ এখনো নিভে নাই, আমরা এখনো বিলীন হই নাই। পৃথিবী এখনো নির্মল, তরুণ।
সাম্প্রদায়িকতা শব্দটা দিয়ে একদিন আমরাই স্টিকার বানাব। প্রাচীন ও অচল শব্দের স্মৃতিতে সচল স্টিকার।



View all my reviews