Nov 10, 2020

গুরুত্ববহ তথ্য-উৎস সংকলন | Collection of Important Links

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বিদেশী সংবাদপত্রের খবর সংকলন: Bangladesh Liberation War Newspaper Collection (বিকল্প লিংক)

121 জিবি পরিমাণ ছবিতে নিবদ্ধ তথ্যফোল্ডার রয়েছে ওয়ানড্রাইভে শেয়ার করা ফোল্ডারটিতে। 

নৃবিজ্ঞানের (Anthropology) ১৫০টি বইয়ের তালিকা। 

May 3, 2020

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষক প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম

খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। একটা কণ্টকাকীর্ণ আলোচনা ভিডিও শুনে শুনে না বুঝে তার আংশিক লিখে ফেলেছি। এ ট্রেনিং অবশ্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেয়েছি। কতশত ক্লাসে চোখ মুখ খিচে লিখে যেতে হয়েছে! অবশ্য এই বক্তার সমমাত্রার বাগ্মীতা নেই অন্তত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো। থাকলেও সেটা দুই যুগে একটা পাওয়ার দুর্ভাগ্য কি মতান্তরে সৌভাগ্য হোক, ওসব বিশ্বাস করানোর কিংবা আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের আলোচনার আংশিক লিখিত রূপ:

বাংলাদেশে 'বিশ্ববিদ্যালয়' নামে যা আছে, এটা তো আমরা নিজেরা তৈরি করি নাই। আমি মাঝে মাঝে বলি যে, একটা অদ্ভূত ব্যাপার কমার্স ফ্যাকাল্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বেইচা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। সম্প্রতি একটা কথাবার্তা হচ্ছে নাইট শিফট নিয়ে, ইভনিং ক্লাস নিয়ে। সেখানে যদিও রেগুলার ছাত্র ভর্তি করায় ১২০০ জন। আর ইভনিং-এ ভর্তি করায় ৩৬০০ জন!

মানে ব্যবসাটা ভালোই জমেছে। আমি প্রায়শই বলি কমার্স ফ্যাকাল্টি অন্যায্যভাবে এই ব্যবসাটা করছে। কারণ, সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির নাম বেচতেছে— যে নাম তৈরি করায় তার কোনো ভূমিকা নাই। ও ওই নামটা বেচতেছে। নাম করেছে অন্যরা— আর্টস, সোশ্যাল সাইন্স, সাইন্স— এদের কিছু কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে একটু নামধাম ইউনিভার্সিটির জন্য করেছে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির তো আসলে কোনো প্রকার এলিটিজম নাই, কোনো হায়ার ক্লাসের লোক তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য ছোটবেলা থেকে এই স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় না যে, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করব। একটাও না। কারণ কী? কারণ,
ওর ইউনিভার্সিটি হিসেবে কোনো মেকানিজম নাই। তাইলে ইউনিভার্সিটিটা আছে কেন? কারণ, বিদেশে আছে। Exactly that!

মানে আমাকে ইউনিভার্সিটির মাস্টার হিসেবে আমাদের সোসাইটির কোনো লোক যদি সম্মান করে থাকে, সেটা একমাত্র এই কারণে করে থাকে যে সে ইউরোপ আমেরিকায় দেখেছে— ইউনিভার্সিটির মাস্টারদের সম্মান করতে হয়। আর তো কোনো কারণ নাই। আমি তো আমার সমাজের জন্য কিছুই করি নাই।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল প্রোডাকশন কী? কী গবেষণা করে সে সমাজকে দিয়েছে? কিছুই তো না। কারণ রাষ্ট্রেরই দরকার নেই। রাষ্ট্র কখনো তার কাছে চায়ই নাই— তুই আমাকে এটা করে দে। সারাবিশ্বে তো তাই-ই হয়। আপনারা জানেন, কথাবার্তা শুনেন, অমুক মাস্টার খুবই আপার লেভেলের। প্রমাণ কী? বলে— ও বিরাট প্রজেক্ট নিয়া আসে।

এই প্রজেক্ট নিয়া আসার মানে বুঝেন তো? এটার একমাত্র কারণ হল, রাষ্ট্র এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ওর কাছে বলে যে, তুই আমাকে এই কাজটা করে আমাকে কিছু ফল দে। রাষ্ট্র তো ইউনিভার্সিটির কাছে চায় নাই যে, তুই আমাকে একটু বল— আমি এডুকেশনে আগামী ১০ বছর কী কী প্রকল্প নিব?

আপনারা বরাবরই দেখবেন যে, বিরাট বিরাট নিউজ হয়ে যাচ্ছে— প্রাইমারি স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, হাই স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, বই চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে! কোত্থেকে বেরোয় তাহলে এই জ্ঞান?
এই হারামজাদারা এই জ্ঞান কোত্থেকে পেল? ওরা ছয়শ সাতশ মিলে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ টমন কইরা আইসা বলে যে ওটা চেঞ্জ করে দাও!
ওই দেশে (এমন দেশে) কি ইউনিভার্সিটি বিকশিত হয়?

ইউনিভার্সিটির কাছে তো চাইতে হবে রাষ্ট্রর, টাকা দিবে, যে তুই আমাকে বলে দে— আগামী ১০ বছরে আমি শিক্ষাখাতে কী কী পরিবর্তন আনব? এর নামই তো গবেষণা! এর নামই তো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। তো ওটা নাই!

তারপরও লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে এবং আমি জানি বেশ ৩২ দন্ত বিকাশ করে লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দারুণ হেসে শ্লাঘা অনুভব করে। কোত্থেকে আসে এই শ্লাঘা? বিদেশ থেকে আসে। কারণ, লোকে জানে আইনস্টাইন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত, লোকে জানে নিউটন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত। আমিও ইউনিভার্সিটির মাস্টার, আইনস্টাইনও মাস্টার। তাই না? লোকে ক্যাটাগরি করে এই লোক যেহেতু মাস্টার ফলে ওকে একটা সালাম দেয়া যেতে পারে।

আস্ত ভিডিও: www.youtube.com/watch?v=A9xEt914UaI
লিখিত রূপের ভিডিও: www.fb.com/Arif1415/videos/3139000702789322/

Apr 30, 2020

রঙিন সেদিনগুলো

Image may contain: sky, cloud, twilight, outdoor and nature

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর 
ব্যস্ত মানুষজন 
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।

উড়ছে পাখি, উড়ছে মেঘ
উড়ছে হাওয়ায় তুলো
উড়ে বেড়ায় চোখের ভেতর
রঙিন সেদিনগুলো।

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর
ব্যস্ত মানুষজন
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।

ইটের পরে ইটে গড়া
হাজার অটালিকা
স্বপ্ন আমার দূরের আকাশ
মিথ্যে মরীচিকা।

উড়ছে পাখি, উড়ছে মেঘ
উড়ছে হাওয়ায় তুলো
উড়ে বেড়ায় চোখের ভেতর
রঙিন সেদিনগুলো।

ব্যস্ত নগর ব্যস্ত শহর
ব্যস্ত মানুষজন
কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যাবে
একলা আমার মন।


ছায়াছবি: নিরন্তর 
হুমায়ূন আহমেদের জনম জনম উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। 


Jan 30, 2020

আঘুণ মাসের খাতা

হবিগঞ্জের জমিন ধরে ছুটি, বায়ে ঝরে পড়ে ঘোলাটে বিকেল...
পড়ন্ত সে কোমল বিকেলের সামনে সমানে ধুলিধূসরিত আঘুণী ধানখেত
মেঘ নাই, আকাশের নীল নাই, শুধু মাঠে কাটা ধানের শুকনো গোছার সমুদ্র
আহারে শূন্যতা! কী বিশালত্ব তার! কী চাউনি!
সে শুকনো মাঠে, কতগুলো ছেলের ক্রিকেটে মাতে শৈশব, নারকেলের ডাগ্যায় চলে ব্যাটিং
দিগন্ত জোড়া বিস্তর প্রান্তর মেলা বয়েসী উল্লাসে খেলে খালি পায়ের হাফপ্যান্ট কমান্ডোর দল
সে ছোট খেলুড়ের দল না জানি গড়া ক্রোশব্যাপী কত প্রতিবেশী গুনে
আমি জানি, এ শৈশবেরাও যাবে জাদুঘরে, শিগগির, কারণ বাকি পৃথিবীর শিশুরা কড়া যুবক হবে বলে তখনো হয়ত পড়ছে কষে কাগজে কলম-পেন্সিল চষে।
মনে পড়ে প্রমথ চৌধুরীর একখানি চরণ— শৈশবে যে শিশু ছিল না, যৌবনে সে যুবক হতে পারে না।
তবু অসম্ভবের সাধনা চলে সাধন করার চেষ্টায়, রূপকথার দেশে— শিক্ষায়।
ঘাস নাই, গরু নাই, রাখাল নাই, নাই চাষাদের আনাগোনাও
ভীষণ ঘূর্ণাবর্তী পৃথিবীর বুকেও কত এমন থমকে থাকা বিশ্রান্ত দুনিয়ার জানালা খোলা
আইল মেলে দিয়ে ন্যাড়া ধানখেত টুকরো টুকরো, কিছু নেই বাড়তি! তবু কিছু চাই না!
এর মাঝে প্রায়ই দীঘল পথ বয়ে গেছে যত দূর গিয়ে দিগন্ত ছাপায়
দুধারে মরাঘাসের সে দীঘল পথের সরু শাদা দাগ কেটে কোনো বাবার সাংহাই-চায়না সাইকেল ছুটে চলে গোধুলীর দিকে...
ফুলহাতা মলিন শার্ট গতরে, লুঙ্গি হাওয়ায় ফুলে এবড়ো খেবড়ো মাটির হেলকি দুলকি চলুনি—
আহা রে চাষার অবলা দিনগুলি! কত সহজ সাবলীলে অমনি চলে অস্তাচলে।
আহা রে আমার ধানখেতের মেঠোপথ! তুই কেন আরো ধানখেত গড়ালি না?
সেদিন কি হাট-বার? না মনে হয়। কাঁধে পাত্তি-ঝোলানো হাটুরে তো কেউ দেখা দিল না!
কখনো সখনো নেশা ভাঙে দৃষ্টির— মাঠ ধরে গেঁথে গেঁথে টানা তারের খাম্বা। দূরে যায়, কাছে আসে। ফাঁকে ফাঁকে ধরা দিয়ে যায় থোকা থোকা বাড়ি-দ্বীপ।
সাতখান-ছয়খান আইলের বিরতিতে একখান করে পাড়া— সযতনে আঙিনাগুলো আড়াল করে ঘিরে আছে ভিনদেশী ইউক্যালিপটাস,
তালগাছ নেই, বটগাছ নেই এদেশে আর। বাবুই পাখির বাসাও বোধয় চড়ুই পাখির কবিতায়...
কখন হঠাৎ খেয়াল হয় উঁচু উঁচু গাছগুলো ডাল ছুটিয়ে সচকিতে হয়ে গেছে চুঙ্গা চুঙ্গা ইটের ভাটা...
এ নিশ্চিন্ত বিকেল দেখার জন্য কোনো পাখির দলও নাই
বিজন মাঠের পর মাঠ... বিবর্ণ আকাশের তলে হঠাৎ বিরলে
ধর্মজাল খাড়ায়ে ঝুলে নির্জন, নিস্তরঙ্গ খালের পাড়ে, কানাবগীরও ছুটি!
এই দর্শকহীন কোলহলবিহীন নীরব পসরায়, যুগ হারানো খোয়া যাওয়া স্মৃতি, নিভৃত, নির্বিকার পল্লীর
এত আয়োজন!
সবই বৃথা
যদি
আমি না থাকি।

অগ্রহায়ণের শেষ, পৌষের পয়লা দিনে করা খসড়া থেকে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ, ঢাকা থেকে সিলেটে আসার সময়। অবসরগুলো কেউ দিয়ে যাও অযতনে, সযতনে লব থুবায়ে মনমতন। কিছু কিছু শব্দ গ্রামীণ এবং লোকায়ত। এই আঘুণ মাস এলে মার কথা খুব মনে পড়ে। কখনোবা আঘুণ মাসের ছলেও মাকে মনে পড়ে। আমি আঘুণ মাসের, আমার মা— আঘুণ মাসের মা।