Sep 13, 2018

বিশ্বপ্রকৃতি ও মানুষ: আধুনিক বিজ্ঞানের রূপরেখাবিশ্বপ্রকৃতি ও মানুষ: আধুনিক বিজ্ঞানের রূপরেখা by পার্থ ঘোষ

দাম দিলাম: 2 of 5 stars


কেন্দ্রীনবিদ, মৌলকণাবিদ, দেশকাল, বিঘ্নন, ধ্রুপদী তত্ত্ব, মহাবিক্ষোভ, সমমিতি (symmetry), কমজোর (weak force), তড়িৎ কমজোর বল, মহামিলন তত্ত্ব (GUT), দ্বিশাখীভবন— এইরকম আরো একশটা শব্দ এই বইটাকে নষ্ট করেছে। বিজ্ঞান শব্দের ঝনঝনানি চায় না, বিজ্ঞান চায় সোজাসাপ্টা, স্পষ্ট ও প্রচলিত টার্মিনেশন।
বিজ্ঞানের দর্শন হল সরলতা, বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের পোষাক পড়িয়ে দিলেই সে সুদর্শন হয়ে উঠবে না। তার নিজস্ব গুণ ও চাহিদা রয়েছে। প্রতিশব্দে ভাষার ব্যবহার স্পষ্ট হয় কিন্তু আমি দেখেছি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একই ভাষায় প্রতিশব্দ ব্যবহারে বোঝার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। একটা বিষয়কে একই ভাষার বিবিধ নামে ডাকলে বিজ্ঞানের খিঁচুনি শুরু হয়ে যাবে। তাই বিজ্ঞান পদের প্রতিশব্দের চাহিদা জানায় না। বরং ভাবের প্রতিরূপ বিজ্ঞানের চাহিদা। যেমন, Simile এবং Metaphor একই বিষয়ের উপর বহু তৈরি করা যেতে পারে। সেটা এক অর্থে ধারণাকে বিভিন্ন অনুরূপ, তুলনামূলক দৃষ্টির মাধ্যমে বুঝতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানে লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রথম উদ্দেশ্য জানানো এবং জানানো বিষয়গুলো বুঝতে পারবে এমনভাবে উপস্থাপন করা। বুঝতে গিয়ে ভাষা ঝর্ণার মত শব্দ ঝারতে থাকলে বিজ্ঞান তলিয়ে যেতে পারে।

অনেক লেখকের মত হল বাংলায় বিজ্ঞানের প্রসারে বাংলা শব্দ ব্যবহার করা। কিন্তু শব্দচয়নের ক্ষেত্রে ঘটনা সংশ্লিষ্ট থাকে, যেহেতু আবিষ্কারের জগৎটা প্রায় বিদেশী তাই বিদেশী শব্দ যখন বিদেশী বিজ্ঞানের টার্ম হিসেবে ঢুকে তখন সেটি সংশ্লিষ্টতা ধরে রাখতে পারে। কিন্তু দেশীয় ভাষায় তখন রূপান্তর করতে গিয়ে উক্ত শব্দের সমার্থক শব্দ বের করতে হয়, বহু ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দটি ভাষার সমার্থকতা বহন করে, ঘটনার সংশ্লিষ্টতা ধারণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমার মত হল, বিজ্ঞানে ভাষার রূপান্তরের কুস্তী না করে বিজ্ঞানের কাজ বাড়ানো। বিজ্ঞানে দেশীয় সৃষ্টিই পারে সবচেয়ে যুৎসই দেশীয় শব্দ উপহার দিতে। জোরটা তাই শব্দে আসুক, কিন্তু আবিষ্কারের ঝোঁক থেকে।

'৯২ সালের বই বলে '৯২ দিয়ে বিচার করতে পারছি না। কারণ, আমি পাঠক তো '৯২ এর না। আর বিজ্ঞানের চিরায়ত ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে তো আর '৯২ না '১৮ এমন কোনো ব্যাপার নেই। পড়তে পড়তে কল্পনায় আসছিল, বইটা উইকিপিডিয়ার পাতা হলে একই পাঠ ঝুরঝুরে করে দেয়া যেত। এই যে বইটার সমালোচনা করলাম এটা যতটা আশঙ্কার তার চেয়ে বেশি আশঙ্কার হল বিজ্ঞানের বিষয়ের প্রকাশিত সমসাময়িক বইগুলোও এইরকম কেবল বাংলা বাক্যের সমাহার।
আমাদের প্রকাশনীগুলো কি এখনো ছবির ব্যবস্থা করতে পারে না? লেখাসংক্রান্ত পুরো দায়িত্বই বুঝি লেখকের? প্রকাশনা কেবল বিক্রয়ের ব্যাপার দেখবে। আমাদের পাঠকরা কি সমীকরণবিমুখ? সমীকরণবিমুখ পাঠক যেমন আছে, গৎ-বিজ্ঞান বিমুখ পাঠকও আছে। কেন জানি, সমীকরণবিমুখতাই বাজারে চাউর হয়ে আছে। অথচ সমীকরণের বইগুলো যে পাঠক তৈরি করবে তারা তো গৎ লেখকের বাড়তি বাজার। গৎ তো চলবেই, কিন্তু এতে কি বেগ বাড়ে?

গুডরিডসে রিভিউ দেয়া অভ্যাস হয়ে গেছে। অন্যান্য রিভিউ দেখতে পারেন এখানে।