May 3, 2020

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষক প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম

খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। একটা কণ্টকাকীর্ণ আলোচনা ভিডিও শুনে শুনে না বুঝে তার আংশিক লিখে ফেলেছি। এ ট্রেনিং অবশ্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেয়েছি। কতশত ক্লাসে চোখ মুখ খিচে লিখে যেতে হয়েছে! অবশ্য এই বক্তার সমমাত্রার বাগ্মীতা নেই অন্তত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো। থাকলেও সেটা দুই যুগে একটা পাওয়ার দুর্ভাগ্য কি মতান্তরে সৌভাগ্য হোক, ওসব বিশ্বাস করানোর কিংবা আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের আলোচনার আংশিক লিখিত রূপ:

বাংলাদেশে 'বিশ্ববিদ্যালয়' নামে যা আছে, এটা তো আমরা নিজেরা তৈরি করি নাই। আমি মাঝে মাঝে বলি যে, একটা অদ্ভূত ব্যাপার কমার্স ফ্যাকাল্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বেইচা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। সম্প্রতি একটা কথাবার্তা হচ্ছে নাইট শিফট নিয়ে, ইভনিং ক্লাস নিয়ে। সেখানে যদিও রেগুলার ছাত্র ভর্তি করায় ১২০০ জন। আর ইভনিং-এ ভর্তি করায় ৩৬০০ জন!

মানে ব্যবসাটা ভালোই জমেছে। আমি প্রায়শই বলি কমার্স ফ্যাকাল্টি অন্যায্যভাবে এই ব্যবসাটা করছে। কারণ, সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির নাম বেচতেছে— যে নাম তৈরি করায় তার কোনো ভূমিকা নাই। ও ওই নামটা বেচতেছে। নাম করেছে অন্যরা— আর্টস, সোশ্যাল সাইন্স, সাইন্স— এদের কিছু কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে একটু নামধাম ইউনিভার্সিটির জন্য করেছে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির তো আসলে কোনো প্রকার এলিটিজম নাই, কোনো হায়ার ক্লাসের লোক তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য ছোটবেলা থেকে এই স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় না যে, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করব। একটাও না। কারণ কী? কারণ,
ওর ইউনিভার্সিটি হিসেবে কোনো মেকানিজম নাই। তাইলে ইউনিভার্সিটিটা আছে কেন? কারণ, বিদেশে আছে। Exactly that!

মানে আমাকে ইউনিভার্সিটির মাস্টার হিসেবে আমাদের সোসাইটির কোনো লোক যদি সম্মান করে থাকে, সেটা একমাত্র এই কারণে করে থাকে যে সে ইউরোপ আমেরিকায় দেখেছে— ইউনিভার্সিটির মাস্টারদের সম্মান করতে হয়। আর তো কোনো কারণ নাই। আমি তো আমার সমাজের জন্য কিছুই করি নাই।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল প্রোডাকশন কী? কী গবেষণা করে সে সমাজকে দিয়েছে? কিছুই তো না। কারণ রাষ্ট্রেরই দরকার নেই। রাষ্ট্র কখনো তার কাছে চায়ই নাই— তুই আমাকে এটা করে দে। সারাবিশ্বে তো তাই-ই হয়। আপনারা জানেন, কথাবার্তা শুনেন, অমুক মাস্টার খুবই আপার লেভেলের। প্রমাণ কী? বলে— ও বিরাট প্রজেক্ট নিয়া আসে।

এই প্রজেক্ট নিয়া আসার মানে বুঝেন তো? এটার একমাত্র কারণ হল, রাষ্ট্র এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ওর কাছে বলে যে, তুই আমাকে এই কাজটা করে আমাকে কিছু ফল দে। রাষ্ট্র তো ইউনিভার্সিটির কাছে চায় নাই যে, তুই আমাকে একটু বল— আমি এডুকেশনে আগামী ১০ বছর কী কী প্রকল্প নিব?

আপনারা বরাবরই দেখবেন যে, বিরাট বিরাট নিউজ হয়ে যাচ্ছে— প্রাইমারি স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, হাই স্কুল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, বই চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে! কোত্থেকে বেরোয় তাহলে এই জ্ঞান?
এই হারামজাদারা এই জ্ঞান কোত্থেকে পেল? ওরা ছয়শ সাতশ মিলে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ টমন কইরা আইসা বলে যে ওটা চেঞ্জ করে দাও!
ওই দেশে (এমন দেশে) কি ইউনিভার্সিটি বিকশিত হয়?

ইউনিভার্সিটির কাছে তো চাইতে হবে রাষ্ট্রর, টাকা দিবে, যে তুই আমাকে বলে দে— আগামী ১০ বছরে আমি শিক্ষাখাতে কী কী পরিবর্তন আনব? এর নামই তো গবেষণা! এর নামই তো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। তো ওটা নাই!

তারপরও লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে এবং আমি জানি বেশ ৩২ দন্ত বিকাশ করে লোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দারুণ হেসে শ্লাঘা অনুভব করে। কোত্থেকে আসে এই শ্লাঘা? বিদেশ থেকে আসে। কারণ, লোকে জানে আইনস্টাইন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত, লোকে জানে নিউটন আসলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াত। আমিও ইউনিভার্সিটির মাস্টার, আইনস্টাইনও মাস্টার। তাই না? লোকে ক্যাটাগরি করে এই লোক যেহেতু মাস্টার ফলে ওকে একটা সালাম দেয়া যেতে পারে।

আস্ত ভিডিও: www.youtube.com/watch?v=A9xEt914UaI
লিখিত রূপের ভিডিও: www.fb.com/Arif1415/videos/3139000702789322/