Aug 9, 2017

শুভ জন্মদিন, অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো!

পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হয় বিজ্ঞানের পিতা। কিন্তু যতই বাপ হোক না কেন এরও একটা নির্ভরশীলতা আছে— প্রকৃতির সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বিষয় গণিতের উপর। প্রকৃতির সবচেয়ে বিস্তর ভাষা পদার্থবিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা হল গণিত। 
আজ একজন মহান বিজ্ঞানীর জন্মদিন। গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো, যিনি আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার অ্যাভোগ্যাড্রো নীতির জন্য।
অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো (আগস্ট ৯১৭৭৬ – জুলাই ৯১৮৫৬
তার জন্ম হয়েছিল ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্টে ইতালির তুরিনে। বাবা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট এবং সিনেটর। তরুণ অ্যাভোগ্যাড্রোও তার বাবার দেখানো পথে আইনে পড়াশোনা ও চর্চা করেন। কিন্তু 'ইতিবাচক দর্শন' এর কাছে ক্রমে আইনের আগ্রহ ক্ষয় পেতে লাগল। এই ইতিবাচক দর্শন (তদানীন্তন নাম) ছিল আসলে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের জগৎটা তখন অত বড় ছিল না যে পদার্থবিজ্ঞানের উপর নামফলক 'দর্শন' দেখে আমাদের অবাক হওয়া উচিত। তার আগ্রহ দানা বাঁধায় বসে রইল না, এগিয়ে চলল ভৌত রসায়নকে ঘিরে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়ে। 
১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে এসে অ্যাভোগ্যাড্রো তার প্রথম বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করলেন লবণাক্ত দ্রবণের বৈদ্যুতিক আচরণের উপর। তিন বছরের মধ্যে আইন ব্যবসা একেবারেই ছেড়েই দিলেন এবং আর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের পড়ানো শুরু করলেন তুরিনের এক হাইস্কুলে। সম্ভবত বিজ্ঞানের ইতিহাসেই মোর ঘোরার শুরুটা হয়ে গেল। সবচেয়ে ভাল আইনজীবী হয়েও তিনি যা করতে না পারতেন, সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানী না হতে পেরেও তিনি তার চেয়ে বড় কিছু করে ফেলবেন। বিজ্ঞানের শক্তির সামনে দাঁড়ানোর কোনো যুক্তির এত সাহস নেই। 
এদিকে ১৮০৯ সালে তিনি রয়েল কলেজ অব ভার্সেলির সিনিয়র টিচার হয়ে গেলেন। দুই বছর পর ১৮১১য় অ্যাভোগ্যাড্রোর সময় হয়ে গেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে যাবার। তিনি দিলেন তার সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক অবদান, একটি হাইপোথিসিস (প্রকল্প) মাত্র! কিন্তু এই হাইপোথিসিস হিসেব বদলে দিতে লাগল। হাইপোথিসিস থেকে হয়ে গেল অ্যাভোগ্যাড্রো আইন। আবার আইন!— তবে বিজ্ঞানের আইন! নির্ভরতার প্রতীক। 

"একই তাপমাত্রায় এবং একই চাপে সমআয়তন সকল গ্যাসের অণুর সংখ্যা সমান।" 

হাইপোথিসিস একটি বৈজ্ঞানিক প্রস্তাবনা, স্বভাবতই প্রমাণের আগে এটা বিজ্ঞানমহলে দাঁড় করানো কঠিন। অ্যাভোগ্যাড্রো সূত্রের জন্য এক দশক সময় লেগে গিয়েছিল এর গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে, তাও অংশত, কারণ তখনকার নামকরা বিজ্ঞানী জন ডাল্টন, জন্স জ্যাকব বার্জেলিয়াস প্রমুখদের তত্ত্বের সাথে না সম্মত হচ্ছিল না এই হাইপোথিসিস। 
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে অ্যাভোগ্যাড্রো তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের সম্মানজনক অধ্যাপক পদে আসীন হন। কিন্তু, রাজনৈতিক কারণে কয়েক বছর পরেই পদ হারান। পরবর্তীতে বছর দশেক ফারাকে পুনর্বহাল হন এবং ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত আসীন থাকেন। অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো ৭৯ বছর বয়সে ৯ জুলাই, ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
শুভ জন্মদিন, বিজ্ঞানী অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো!

Aug 8, 2017

নোবেল বক্তৃতা— ওরহান পামুক

সাহিত্যে নোবেল ২০০৬ জয়ী ওরহান পামুক নোবেল বক্তৃতায়


আপনি কেন লিখেন?— আমার লেখনী জীবনে সবচেয়ে বেশিবার সম্মুখীন হওয়া প্রশ্ন। বেশিরভাগ সময় লোকে বলতে চায়: কী লাভ লিখে? কেন আপনি আপনার সময় এই অদ্ভূত এবং অসম্ভব কাজে ব্যয় করেন? কেন লিখেন…
"তখন আপনাকে একটি অজুহাত দিতে হবে, লেখালেখির জন্য জন্য ক্ষমা চাইতে হবে"— ঠিক এমন একটা দৃশ্য আমার মনে হয় প্রতিবার যখনই আমি এই প্রশ্ন শুনি। কিন্তু প্রতিবারই আমি ভিন্ন উত্তর দেই… কখনো বলি: আমি জানি না আমি কেন লিখি, কিন্তু এতে খুব ভাল লাগা কাজ করে। আমি আশা করি আপনারও একই রকম লাগবে যখন আপনি আমাকে পড়বেন।
কখনো বলি যে আমি খুব রাগী, তাই আমি লিখি। বেশিরভাগ সময় রুমে একা থাকতে জিদ চাপে, তাই বসে বসে লিখি।
আমার শৈশবে আমি একজন চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলাম। আমি প্রতিদিন রঙ করতাম। আমার এখনো সেই শিশুসুলভ আনন্দ এবং সুখের অনুভূতি কাজ করে যখন আমি লিখতে বসি।
আমি লিখি আমার শৈশবের পুরনো সুখ খুঁজে পেতে। আর তাই আমার জন্য সাহিত্য এবং লেখালেখি আমার সুখের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথবা এর অভাব… আমার বেদনার কারণ। আমার শৈশবে, আমি আনন্দে কাটাতাম, প্রচুর রঙ করতাম আর বড় সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিত। সকলেই ছিল ভদ্র, নম্র এবং  স্নেহপরায়ণ। আমি এগুলো সব লিখেছি আমার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ইস্তাম্বুলে ইস্তাম্বুল প্রকাশিত হওয়ার পর, কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করল: আপনার আত্মজীবনী লিখে ফেলার জন্য আপনার বয়স কি একটু বেশিই কম নয়?
আমি নীরবতা বজায় রাখতাম। সাহিত্য আনন্দের বিষয়, আমি বলতে চেয়েছিলাম, শিশুসুলভ আচরণ বাঁচিয়ে রাখার কথা, নিজের ভেতরের শিশুমনটিকে জীবিত রাখা… তো, বছর কয়েক পর এখন এসে আমি তার পুরষ্কার পেলাম। এবার সেই একই লোকগুলো প্রশ্ন করা শুরু করল, নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার জন্য আপনার বয়সটা একটু কম হয়ে গেল না? (দর্শকশ্রোতাদের মধ্যে হাসির রোল)
আদতে নোবেল পুরষ্কারের ঘোষণা শোনার পর থেকে আমি সবচেয়ে বেশি শুনেছি: নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার অনুভূতি কী? আমি বলি, ওহ! এটা দারুণ। সব বড় বড় গণ্যমান্য লোক ক্রমাগত আমাকে হাসি বিলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই সকলেই আবারো ভদ্র, নম্র এবং স্নেহপরায়ণ হয়ে উঠল। সত্যি বলতে, আমি প্রায়ই রাজপুত্রের মত অনুভব করেছি। একটি বাচ্চার মত অনুভব করেছি।
তখন মনে হয়েছে, আমি বুঝতে পারলাম কেন আমি মাঝে মাঝে এত রেগে যেতাম। এই পুরষ্কার আমাকে নিয়ে গেছে আবেগাপ্লুত খুশির শৈশবে আর সেই অচেনা লোকদের মায়ায়, আমাকে অন্তত এই বয়সে(৫৪) দেয়া যেত না, যেটা অনেকে মনে করেন বেশিই শীঘ্র, কিন্তু তারও অনেক আগে, সম্ভবত আমার জন্মের দুই সপ্তাহ পর দেয়া হলে আমি উপভোগ করতে পারতাম রাজপুত্রশিশু হয়ে আমার সারাটি জীবন। এমনকি… এখনই এটা চিন্তা করা যেতে পারে… এই সেই কারণ যেকারণে আমি লিখতে পছন্দ করি এবং আমি এটা চালিয়ে যাব। (করতালি)

ডিসেম্বর ১০, ২০০৬।