এক পথিক ভ্রমণ করিতে করিতে হঠাৎ করিয়া স্বর্গে আসিয়া উপনীত হইলেন!
আচমকাই তাহার চারপাশ তাহাকে যেন থমকাইয়া দিল।
কেউ কোথাও নেই, অথচ কে যেন ভেতর থেকে বলিতেছে— ইহা স্বর্গ, ইহাই স্বর্গ!
পথিক এক গাছের ছায়াতলে গিয়া বসিল। সে বৃক্ষের নাম— সাধবৃক্ষ। সাধবৃক্ষের নিচে দাঁড়াইয়া যাহা চাওয়া হয় তাহাই পাওয়া যায়।
পথিক ভাবিল, "আমি ক্ষুধার্ত, কিছু খেতে পেলে মন্দ হইত না।" ভাবিতে বিলম্ব হইল,
তাহার সামনে সরাৎ সরাৎ টেবিল আসিয়া খাবারে ভরিয়া যাইতে বিলম্ব হইল না।
পথিক অবাক না হওয়ার কোনো সুযোগ পাইল না।
পথিক ভাবিল— একি! ইহা তো হইতে পারে না।
পুনরায় ভাবিতে কেবল বিলম্ব হইল, হুশ হাশ করিয়া টেবিল খাবার সমেত অদৃশ্য হইতে সময় লইল না।
ভারী মছিবত তো!
"আবার ফিরিয়া আসুক আহার!"- ভাবিতেই হাজিরা ঘটিয়া গেল।
প্রহর ধরিয়া পথিক খাওয়া চালাইল। তাহার জীবনে এত স্বাদের আহার সে করে নাই।
আহার ফুরাইলে পানীয়ের সাধ জাগিল— সাধবৃক্ষ কোনরূপ অন্যথা করিল না।
কারণ, স্বর্গে কোনো বাধা নাই। নিয়ম-অনিয়মের বালাই নাই। অনিয়মও সেথা নিয়ম।
অতি আহারে ক্লান্ত পথিক শুইয়া রহিল। বৃক্ষতলে শ্রান্তির সাথে মদ্যপান করিতে লাগিল।
মনে আয়েশে আশ্চর্যবোধ চাড়া দিতে লাগিল। তাহার লক্ষণ তাহার হুশের ভিতর থেকে ছুটিল।
"কেন এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটা লাগবে! এটা হওয়ার দরকার কী? এত্ত ভাল হওয়ার মাঝে নিশ্চয়ই ঝামেলা আছে।
এ নিশ্চয়ই ভূতেদের কাজ। তারা আমার সাথে তামাশা করিতেছে!"
ভাবিতে ঘোর লাগিল, কিন্তু ঘোরের সাধও ফিরিয়া গেল না। সত্যই তাহার সম্মুখে ভূতের আবির্ভাব ঘটিল।
পৃথিবীর অসম্ভব জিনিসও এইখানে সম্ভব হইবে সেই খেয়াল তাহার ছিল না— থাকার কথাও না। তারা দেখিতে
ছিল তেমনি ভয়ংকর— যেমনটি পথিক ভাবিয়াছিল।
আতংকে মদের বোতল ছুঁড়িয়া ফেলিল। মারিয়া ফেলিবে নাকি!
ভাবিতে সময় পার হইল। তাহার মরিতে ক্ষণকাল ব্যয় হইল না।
স্বর্গে মৃত্যু নাই— কিন্তু ইচ্ছার উপর অন্য কোনো কথা নাই। সাধ মিটানো হইবেই— ইহাই স্বর্গের পণ, নিয়ম।
মানুষ তাহার ইচ্ছার জগতেই বসবাস করে। তাহার ইচ্ছাই তাহাকে ঠেলিয়া লইয়া চলে। ইচ্ছা হয়ত তাহার শক্তি— কিন্তু সে ইচ্ছারই অধীন। ইচ্ছাশক্তিই তাই সবচেয়ে ক্ষমতাবান।
No comments:
Post a Comment