Oct 31, 2017

চার হাজার বইয়ে কয় হাজার পাতা হে বৃটিশ লাইব্রেরী?

আগে কার গুণ গাইব? লাইব্রেরির নাকি ভারতীয় বইয়ের? বস্তুর বিচারে বড় লাইব্রেরি দিয়ে বলি। আমি যখনই লাইব্রেরির কথা বলতে যাই আমাদের দেশের জাতীয় গণগ্রন্থাগারের অনাথ, দুর্বল চিত্র আমার চোখে ভেসে ওঠে। আমি কখনো এই দরিদ্রদশার কথা ভুলতে পারব না। আমাদের এত মানুষ, এত পাকা দালানে ঠাসা শহরে এত ক্ষমতাবান সরকার পোষে যেন এক অর্ধকদাকার বেড়াল। সে কথা আরেকদিন হবে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার তুমি বড় হও ভেতরে ভেতরে।
বৃটিশ লাইব্রেরি - পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় গ্রন্থাগার
বৃটিশ লাইব্রেরি দুনিয়ার তাবৎ জাতীয় গ্রন্থাগারের মধ্যে সবচেয়ে বড়। অর্থাৎ বৃটিশ সরকার অন্য যেকোনো দেশের সরকারকে লাইব্রেরি দিয়ে হারিয়ে দিতে পেরেছে। কথাটা খুব বাছাই করা বাক্য হলেও তা আসলে বইয়ের সাথে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ করে।


বৃটিশরা উপমহাদেশে প্রভুত্বের কারণে এখানকার সাহিত্য নিয়ে তাদের চর্চা ছিল, তারা তো আর ভারতবর্ষের মত গোঁড়া ছিল না যে ছাই উড়ানোর কষ্ট করতে নারাজ হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে 'ইউকে ইন্ডিয়া ইয়ার অব কালচারাল প্ল্যান ফর-২০১৭' পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। উদ্দেশ্য বৃটিশ লাইব্রেরির ১৭১৩ থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত সংগৃহীত চার হাজার ভারতীয় প্রিন্টেড বাংলা বইকে ডিজিটাইজ করা। সে ৪ হাজার বইয়ে আছে ৮ লক্ষাধিক পাতা। বাংলা বইয়ের পরিকল্পনাটুকু অবশ্য বড় প্রকল্পের অংশ— টু সেঞ্চুরিজ অব ইন্ডিয়ান প্রিন্ট। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে 'নিউটন ফান্ড'। এই পাইলট প্রকল্পটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস, সৃষ্টি ইনস্টিটিউট অব আর্ট, ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের SOAS লাইব্রেরির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে। 

তিনশ বছর আগ থেকে দুইশ বছরের ক্রমিক আয়োজন হতে যাচ্ছে ভারতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সাহিত্য নিয়ে গবেষণার খোরাক। দীর্গ সময়ের ব্যবধানে সেগুলো প্রকাশের স্বত্ব হারিয়েছে। আপাতত উইকিসংকলনে ৪০২০টি গ্রন্থভুক্তির কাজ শেষ। আরেকবার বলতে মন চাচ্ছে— ৮ লক্ষাধিক পাতার কাগজ এখন ছবি হয়ে সংকলিত গেছে উইকিসংকলনে। যথাশীঘ্রই ছবিগুলো থেকে ওসিআর, প্রুফ রিডিং, সম্পাদনার কাজ শুরু হয়ে যাবে। 
তারা তৈরি হয়ে যাবে উইকিসংকলনেওর পরিচিত পরিবেশে। 
কিন্তু যে কেউ চাইলে এখনো পড়তে পারে। ছবির পিডিএফে আমরা বই পড়ি না তা তো আর না। 
আমরা হতভাগ্য জাত- সব কিছু সয় আমাদের। শুধু সয় না অভিজাত হয়ে গেলে বইকেও নিজের সাথে অভিজাতশ্রেণীর অঙ্গ মতন ভাবা। 



ভারতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার থেকে স্ক্যান



আরো পড়ুন ভাল সময় কাটাতে:
http://www.sachalayatan.com/tareqanu/45581
https://bn.wikipedia.org/wiki/জাতীয়_গ্রন্থাগার

Oct 21, 2017

পাঠ পর্যালোচনা - টমাস আলভা এডিসন

টমাস আলভা এডিসনটমাস আলভা এডিসন by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
My rating: 3 of 5 stars

এডিসনের ব্যাপারে সমালোচনা করলে এডিসনের কিছু আসবে যাবে না, বরং বাড়িয়ে প্রশংসা করলে সাধারণ মানুষ হতাশ বোধ করতে পারে।
আমি একটি সন্তোষজনক দৃষ্টিভঙ্গি বেছে নিচ্ছি। কেউ যদি বলে সিটভর্তি বাসে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী ও তার বসার সুযোগ পাওয়ার হিসেব করে একটা যন্ত্র তার ভাড়া কেটে নিবে এমন যন্ত্র বানিয়ে তার পেটেন্ট নিবে তো কারো কি আপত্তি আছে? থাকার কথা নয়। ২৩৩২টি পেটেন্ট ছিল এডিসনের যার মধ্যে ১০৯৩টি যুক্তরাষ্ট্রে। যারা পদার্থবিজ্ঞান পড়ো তাদের বলি, এডিসন আসলে সত্যিকার অর্থে পদার্থবিজ্ঞানী নন, বিজ্ঞানের ভেতর বাস করা একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাই ব্যবসা ভাল বোঝা তার দোষ নয়, ইঞ্জিনিয়ার এর সংজ্ঞার চাহিদা থেকেই ব্যবসায়ী কার্যক্রম নৈতিকভাবেও বৈধ।
এডিসন আমাদের কোনো নতুন তত্ব বা জ্ঞান দিয়ে যান নি। তিনি বরং জ্ঞানকে কৌশল বানিয়েছেন— তাও আবার হাজার হাজার কৌশল। তত্ত্ব যাতে কাজে লাগানো যায়, সেজন্যই আমাদের দরকার হয় ইঞ্জিনিয়ারদের। কারণ, তাত্ত্বিকেরা কাজ করেন রহস্য অবমুক্ত করার জন্য, আর প্রকৌশলীরা কাজ করেন রহস্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য।
আমি চাই কেউ যেন হাজার পেটেন্ট দেখেই আকাশ থেকে পড়ে এডিসনের জন্য আহাজারিতে মরে না যায়। আবার তার অধ্যাবসায়ের ইতিহাসকেও কেউ যেন মূহুর্তের জন্য অসম্মান না করে। আহাজারির অর্থ সে পেরেছে আমি পারব না, আর সম্মানের কারণে তার পথে যে কেউ এগিয়ে যেতে পারবে।
পুরো বইটাতে তার জীবনের এত পর্যায় এল, কিন্তু টেসলার নাম এল না। এ দিক থেকে এডিসন যেমন টেসলার সাথে অবিচার করেছেন, লেখকও এডিসনের প্রতি একটু বাছবিচার করেছেন বলে মনে করি। তবে বইয়ের ক্ষেত্রে এটা হতেই পারে, বই তো আর উইকিপিডিয়া নয় যে ভাল খারাপ সবই থাকতে হবে। বইয়ের উদ্দেশ্য আলোর গল্প করা, কিন্তু সত্যকে ছেড়ে না দেওয়াও নয়। এক খাতিরে মিথ্যা কিছু প্রকাশ না করায় এ দোষ ঘাড় থেকে নেমে যায়।

বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বন্ধুত্বটা হল এরা একে অন্যের পরিপূরক। তা কেমন? প্রযুক্তি নিজ থেকে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, কিন্তু নিজ থেকে জন্ম নিতে পারে না। বিজ্ঞান নিজেই জন্ম লাভ করে সত্য, কিন্তু আবার একা একা পৌঁছাতে পারে না বড় জনগোষ্ঠীর কাছে। এই পৌঁছে দেয়ার কাজটা করে প্রযুক্তি।
বিজ্ঞানের নায়কদের বলি বিজ্ঞানী, প্রযুক্তির কারিগরদের বলি উদ্ভাবক।
দুই-ই আমাদের বুদ্ধিমত্তার জয় নির্ধারক।

View all my reviews

Aug 9, 2017

শুভ জন্মদিন, অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো!

পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হয় বিজ্ঞানের পিতা। কিন্তু যতই বাপ হোক না কেন এরও একটা নির্ভরশীলতা আছে— প্রকৃতির সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বিষয় গণিতের উপর। প্রকৃতির সবচেয়ে বিস্তর ভাষা পদার্থবিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা হল গণিত। 
আজ একজন মহান বিজ্ঞানীর জন্মদিন। গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো, যিনি আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার অ্যাভোগ্যাড্রো নীতির জন্য।
অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো (আগস্ট ৯১৭৭৬ – জুলাই ৯১৮৫৬
তার জন্ম হয়েছিল ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্টে ইতালির তুরিনে। বাবা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট এবং সিনেটর। তরুণ অ্যাভোগ্যাড্রোও তার বাবার দেখানো পথে আইনে পড়াশোনা ও চর্চা করেন। কিন্তু 'ইতিবাচক দর্শন' এর কাছে ক্রমে আইনের আগ্রহ ক্ষয় পেতে লাগল। এই ইতিবাচক দর্শন (তদানীন্তন নাম) ছিল আসলে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের জগৎটা তখন অত বড় ছিল না যে পদার্থবিজ্ঞানের উপর নামফলক 'দর্শন' দেখে আমাদের অবাক হওয়া উচিত। তার আগ্রহ দানা বাঁধায় বসে রইল না, এগিয়ে চলল ভৌত রসায়নকে ঘিরে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়ে। 
১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে এসে অ্যাভোগ্যাড্রো তার প্রথম বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করলেন লবণাক্ত দ্রবণের বৈদ্যুতিক আচরণের উপর। তিন বছরের মধ্যে আইন ব্যবসা একেবারেই ছেড়েই দিলেন এবং আর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের পড়ানো শুরু করলেন তুরিনের এক হাইস্কুলে। সম্ভবত বিজ্ঞানের ইতিহাসেই মোর ঘোরার শুরুটা হয়ে গেল। সবচেয়ে ভাল আইনজীবী হয়েও তিনি যা করতে না পারতেন, সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানী না হতে পেরেও তিনি তার চেয়ে বড় কিছু করে ফেলবেন। বিজ্ঞানের শক্তির সামনে দাঁড়ানোর কোনো যুক্তির এত সাহস নেই। 
এদিকে ১৮০৯ সালে তিনি রয়েল কলেজ অব ভার্সেলির সিনিয়র টিচার হয়ে গেলেন। দুই বছর পর ১৮১১য় অ্যাভোগ্যাড্রোর সময় হয়ে গেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে যাবার। তিনি দিলেন তার সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক অবদান, একটি হাইপোথিসিস (প্রকল্প) মাত্র! কিন্তু এই হাইপোথিসিস হিসেব বদলে দিতে লাগল। হাইপোথিসিস থেকে হয়ে গেল অ্যাভোগ্যাড্রো আইন। আবার আইন!— তবে বিজ্ঞানের আইন! নির্ভরতার প্রতীক। 

"একই তাপমাত্রায় এবং একই চাপে সমআয়তন সকল গ্যাসের অণুর সংখ্যা সমান।" 

হাইপোথিসিস একটি বৈজ্ঞানিক প্রস্তাবনা, স্বভাবতই প্রমাণের আগে এটা বিজ্ঞানমহলে দাঁড় করানো কঠিন। অ্যাভোগ্যাড্রো সূত্রের জন্য এক দশক সময় লেগে গিয়েছিল এর গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে, তাও অংশত, কারণ তখনকার নামকরা বিজ্ঞানী জন ডাল্টন, জন্স জ্যাকব বার্জেলিয়াস প্রমুখদের তত্ত্বের সাথে না সম্মত হচ্ছিল না এই হাইপোথিসিস। 
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে অ্যাভোগ্যাড্রো তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের সম্মানজনক অধ্যাপক পদে আসীন হন। কিন্তু, রাজনৈতিক কারণে কয়েক বছর পরেই পদ হারান। পরবর্তীতে বছর দশেক ফারাকে পুনর্বহাল হন এবং ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত আসীন থাকেন। অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো ৭৯ বছর বয়সে ৯ জুলাই, ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
শুভ জন্মদিন, বিজ্ঞানী অ্যামেদেও অ্যাভোগ্যাড্রো!

Aug 8, 2017

নোবেল বক্তৃতা— ওরহান পামুক

সাহিত্যে নোবেল ২০০৬ জয়ী ওরহান পামুক নোবেল বক্তৃতায়


আপনি কেন লিখেন?— আমার লেখনী জীবনে সবচেয়ে বেশিবার সম্মুখীন হওয়া প্রশ্ন। বেশিরভাগ সময় লোকে বলতে চায়: কী লাভ লিখে? কেন আপনি আপনার সময় এই অদ্ভূত এবং অসম্ভব কাজে ব্যয় করেন? কেন লিখেন…
"তখন আপনাকে একটি অজুহাত দিতে হবে, লেখালেখির জন্য জন্য ক্ষমা চাইতে হবে"— ঠিক এমন একটা দৃশ্য আমার মনে হয় প্রতিবার যখনই আমি এই প্রশ্ন শুনি। কিন্তু প্রতিবারই আমি ভিন্ন উত্তর দেই… কখনো বলি: আমি জানি না আমি কেন লিখি, কিন্তু এতে খুব ভাল লাগা কাজ করে। আমি আশা করি আপনারও একই রকম লাগবে যখন আপনি আমাকে পড়বেন।
কখনো বলি যে আমি খুব রাগী, তাই আমি লিখি। বেশিরভাগ সময় রুমে একা থাকতে জিদ চাপে, তাই বসে বসে লিখি।
আমার শৈশবে আমি একজন চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলাম। আমি প্রতিদিন রঙ করতাম। আমার এখনো সেই শিশুসুলভ আনন্দ এবং সুখের অনুভূতি কাজ করে যখন আমি লিখতে বসি।
আমি লিখি আমার শৈশবের পুরনো সুখ খুঁজে পেতে। আর তাই আমার জন্য সাহিত্য এবং লেখালেখি আমার সুখের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অথবা এর অভাব… আমার বেদনার কারণ। আমার শৈশবে, আমি আনন্দে কাটাতাম, প্রচুর রঙ করতাম আর বড় সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিত। সকলেই ছিল ভদ্র, নম্র এবং  স্নেহপরায়ণ। আমি এগুলো সব লিখেছি আমার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ইস্তাম্বুলে ইস্তাম্বুল প্রকাশিত হওয়ার পর, কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করল: আপনার আত্মজীবনী লিখে ফেলার জন্য আপনার বয়স কি একটু বেশিই কম নয়?
আমি নীরবতা বজায় রাখতাম। সাহিত্য আনন্দের বিষয়, আমি বলতে চেয়েছিলাম, শিশুসুলভ আচরণ বাঁচিয়ে রাখার কথা, নিজের ভেতরের শিশুমনটিকে জীবিত রাখা… তো, বছর কয়েক পর এখন এসে আমি তার পুরষ্কার পেলাম। এবার সেই একই লোকগুলো প্রশ্ন করা শুরু করল, নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার জন্য আপনার বয়সটা একটু কম হয়ে গেল না? (দর্শকশ্রোতাদের মধ্যে হাসির রোল)
আদতে নোবেল পুরষ্কারের ঘোষণা শোনার পর থেকে আমি সবচেয়ে বেশি শুনেছি: নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার অনুভূতি কী? আমি বলি, ওহ! এটা দারুণ। সব বড় বড় গণ্যমান্য লোক ক্রমাগত আমাকে হাসি বিলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই সকলেই আবারো ভদ্র, নম্র এবং স্নেহপরায়ণ হয়ে উঠল। সত্যি বলতে, আমি প্রায়ই রাজপুত্রের মত অনুভব করেছি। একটি বাচ্চার মত অনুভব করেছি।
তখন মনে হয়েছে, আমি বুঝতে পারলাম কেন আমি মাঝে মাঝে এত রেগে যেতাম। এই পুরষ্কার আমাকে নিয়ে গেছে আবেগাপ্লুত খুশির শৈশবে আর সেই অচেনা লোকদের মায়ায়, আমাকে অন্তত এই বয়সে(৫৪) দেয়া যেত না, যেটা অনেকে মনে করেন বেশিই শীঘ্র, কিন্তু তারও অনেক আগে, সম্ভবত আমার জন্মের দুই সপ্তাহ পর দেয়া হলে আমি উপভোগ করতে পারতাম রাজপুত্রশিশু হয়ে আমার সারাটি জীবন। এমনকি… এখনই এটা চিন্তা করা যেতে পারে… এই সেই কারণ যেকারণে আমি লিখতে পছন্দ করি এবং আমি এটা চালিয়ে যাব। (করতালি)

ডিসেম্বর ১০, ২০০৬।

Jul 23, 2017

গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন ও পাঠ্য নির্দেশনা ও বই সংকলন

যারা বিশ্বাস করো গণিত দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায় তাদের জন্য...
২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক, বিভাগীয়, জাতীয় পর্যায়ের প্রশ্নসমূহের সংকলন রয়েছে। যেইসব বাবুরা আগামী দিনের আসিফ, ধনঞ্জয়, মুন, চমক হাসান হতে চাও তাদের জন্য। গুগল ড্রাইভে যোগ করে নাও আর ডাউনলোড করে চর্চা শুরু করে দাও। 

https://drive.google.com/open?id=0B6clXcy_fidDY3lOLS1NejZXYWM বা https://goo.gl/wgkc2M এখান থেকে। 
শুধু প্রশ্ন থাকবে আর প্রস্তুতি থাকবে না, সেই অবিচার এই ফোল্ডারে নেই। কী কী পড়ে এগুনো যাবে তাও দেয়া আছে। আমি আমার এক ছোটভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছি, বসে সাইটের প্রশ্নগুলোকে আনজিপ করে আপ দিয়েছি যেন প্রতিটা কন্টেন্ট ধরে ধরে এক্সেস করা যায়।
শেয়ার করি ওর চেয়েও ছোট সকল ভাই-বোনদের জন্য। এবার বাংলাদেশ গণিত দলে কোনো মেয়ে ছিল না। পদার্থবিজ্ঞানের দলে ছিল  ।
এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রথম দশটি দলে ৬০ জনের মধ্যে ছিল ২ জন মেয়ে। মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
কিন্তু রক্ষণশীল দেশ ইরানের একটা আশাপ্রদ গল্প আছে। মেয়েরা কিভাবে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিবে ইরান থেকে, কেউই তো আগে নেয় নি! এই অবস্থায় ভাগ্য,পরিস্থিতি মিলিয়ে ১৯৯৪ এ দুইজন মেয়ে অংশ নিল। তাদের একজন মরিয়ম মির্জাখানি। আরেকজন রয়া বেহেশতী এখন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গণিতের প্রফেসর।
মির্জাখানি কতখানি গণিতবিদ শোনো। প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ১ নাম্বার কম পেয়ে সোনার মেডেল।
পরের বছর ৪২ এ ৪২ তুলে ব্যক্তিগত ফলাফলে প্রথমস্থান। ঢুকে গেলেন Hall of Fame এ।
প্রথম নারী হিসেবে জিতে নেন গণিতের সর্বোচ্চ পদক ফিল্ডস মেডেল। [২০১৪]
রক্ষণশীল ইরানে যদি মির্জাখানি পারেন তো বাংলাদেশেও কেউ পারবে।
পৃথিবীময় কার্দাশিয়ানের যুগে মির্জাখানির জন্য চেয়ে আছে #বাংলাদেশ। জাগো গো ভগিনী। সাথে জাগরূক ভাইয়ারা।



Jun 23, 2017

সাধবৃক্ষ

এক পথিক ভ্রমণ করিতে করিতে হঠাৎ করিয়া স্বর্গে আসিয়া উপনীত হইলেন!
আচমকাই তাহার চারপাশ তাহাকে যেন থমকাইয়া দিল।
কেউ কোথাও নেই, অথচ কে যেন ভেতর থেকে বলিতেছে— ইহা স্বর্গ, ইহাই স্বর্গ!

পথিক এক গাছের ছায়াতলে গিয়া বসিল। সে বৃক্ষের নাম— সাধবৃক্ষ। সাধবৃক্ষের নিচে দাঁড়াইয়া যাহা চাওয়া হয় তাহাই পাওয়া যায়।
পথিক ভাবিল, "আমি ক্ষুধার্ত, কিছু খেতে পেলে মন্দ হইত না।" ভাবিতে বিলম্ব হইল,
তাহার সামনে সরাৎ সরাৎ টেবিল আসিয়া খাবারে ভরিয়া যাইতে বিলম্ব হইল না।
পথিক অবাক না হওয়ার কোনো সুযোগ পাইল না।
পথিক ভাবিল— একি! ইহা তো হইতে পারে না।
পুনরায় ভাবিতে কেবল বিলম্ব হইল, হুশ হাশ করিয়া টেবিল খাবার সমেত অদৃশ্য হইতে সময় লইল না।
ভারী মছিবত তো!
"আবার ফিরিয়া আসুক আহার!"- ভাবিতেই হাজিরা ঘটিয়া গেল।
প্রহর ধরিয়া পথিক খাওয়া চালাইল। তাহার জীবনে এত স্বাদের আহার সে করে নাই।
আহার ফুরাইলে পানীয়ের সাধ জাগিল— সাধবৃক্ষ কোনরূপ অন্যথা করিল না।
কারণ, স্বর্গে কোনো বাধা নাই। নিয়ম-অনিয়মের বালাই নাই। অনিয়মও সেথা নিয়ম।

অতি আহারে ক্লান্ত পথিক শুইয়া রহিল। বৃক্ষতলে শ্রান্তির সাথে মদ্যপান করিতে লাগিল।
মনে আয়েশে আশ্চর্যবোধ চাড়া দিতে লাগিল। তাহার লক্ষণ তাহার হুশের ভিতর থেকে ছুটিল।
"কেন এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটা লাগবে! এটা হওয়ার দরকার কী? এত্ত ভাল হওয়ার মাঝে নিশ্চয়ই ঝামেলা আছে।
এ নিশ্চয়ই ভূতেদের কাজ। তারা আমার সাথে তামাশা করিতেছে!"

ভাবিতে ঘোর লাগিল, কিন্তু ঘোরের সাধও ফিরিয়া গেল না। সত্যই তাহার সম্মুখে ভূতের আবির্ভাব ঘটিল।
পৃথিবীর অসম্ভব জিনিসও এইখানে সম্ভব হইবে সেই খেয়াল তাহার ছিল না— থাকার কথাও না। তারা দেখিতে
ছিল তেমনি ভয়ংকর— যেমনটি পথিক ভাবিয়াছিল।

আতংকে মদের বোতল ছুঁড়িয়া ফেলিল। মারিয়া ফেলিবে নাকি!

ভাবিতে সময় পার হইল। তাহার মরিতে ক্ষণকাল ব্যয় হইল না।

স্বর্গে মৃত্যু নাই— কিন্তু ইচ্ছার উপর অন্য কোনো কথা নাই। সাধ মিটানো হইবেই— ইহাই স্বর্গের পণ, নিয়ম।

মানুষ তাহার ইচ্ছার জগতেই বসবাস করে। তাহার ইচ্ছাই তাহাকে ঠেলিয়া লইয়া চলে। ইচ্ছা হয়ত তাহার শক্তি— কিন্তু সে ইচ্ছারই অধীন। ইচ্ছাশক্তিই তাই সবচেয়ে ক্ষমতাবান।

May 16, 2017

পরিবহন ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশের ওয়্যারলেস চার্জিং পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট

টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ির বেশ সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের অঙ্গীকার লক্ষ করা যায়। কিন্তু এই পরিবহন ব্যবস্থায় মাথাব্যাথার কারণ হল ভারী ব্যাটারী, রিচার্জ করার সমস্যা। রিচার্জেবল ব্যাটারী খুবই ব্যয়বহুল আবার রিচার্জ করতেও যথেষ্ঠ সময় নিয়ে থাকে।
পরিবেশের সাথে একটু সখ্যতা করল বটে, কিন্তু সময় ও অর্থের সাথে বৈরীতা করে গতিশীল অর্থনৈতিক সাধনা করা মানবসমাজের জন্য একটা সমস্যা ঠিকই রেখে দিল।

ইসরায়েল পরীক্ষামূলকভাবে তারবিহীন চার্জিং এর মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থায় অভিনবত্ব আনার প্রচেষ্টা করছে। 

ইসরায়েল একটি অভিনব প্রচেষ্টা করছে, রাস্তায় তারবিহীন চার্জ করার মাধ্যমে। অনেকটা বৈদ্যুতিক ট্রেনে যেমন সরাসরি লাইন থেকে শক্তি প্রদান করা হয়, তেমনি রাস্তা দিয়ে তারবিহীন চার্জারের মাধ্যমে গাড়ি শক্তি গ্রহণ করে চলবে। এতে করে আর আগের মত ভারী ব্যাটারী ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এমনকি রিচার্জের উদ্দেশ্যে আলাদা করে থেমে সময় খরচ করতে হচ্ছে না। ঠিক যেমনটা গতিশীল পরিবহন ব্যবস্থা চেয়েছে প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতায় উন্মীলিত মানুষেরা।

বর্তমানে ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিবের রাস্তায় ৮০ ফুট (মাত্র ২৪ মিটারের কিছু বেশি) দৈর্ঘ্যে এর প্রোটোটাইপ প্রকল্প চলছে। পরীক্ষামূলক প্রকল্প সফল হলে ২০১৮ সালের মধ্যে এটি আধাকিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ করা হবে এবং পরবর্তীতে ইসরায়েলের এইলাট শহর এবং রমন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যকার ১১ কিলোমিটার রাস্তায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। চলবে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ শাটল সার্ভিস।

ইসরায়েলিরাই যে প্রথম তা কিন্তু নয়, কোরিয়ানরা বরং এই পদ্ধতি আরো আগেই ধরে ফেলেছে। Korea Advanced Institute of Science and Technology ১৫ মাইল দীর্ঘ রাস্তায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তারবিহীন পদ্ধতিতে যেভাবে মোবাইল চার্জ দেয়া হয়, ঠিক একই নীতি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে, কেবল একটু বৃহত্তর স্কেলে। বৈদ্যুতিক আবেশের নীতি ব্যবহৃত হয়েছে এখানে।

কোরিয়াতে রাস্তা থেকে বাসের রিচার্জিং মেকানিজম তল মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার ব্যবধানে থাকে। দূরত্ব বাড়লে চার্জিং এফিসিয়েন্সি (দক্ষতা) কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে ১০০কিলোওয়াটে চার্জিং কর্মদক্ষতা ৮৫%। চার্জিং প্লেটগুলো বিস্তারের হিসেব করলে তারা রাস্তার ৫-১৫% জায়গা খরচ করেছে। কোরিয়াতে এই পরীক্ষণটি চলছে দুটো ইনডাকশন বাস দিয়ে, সফল হলে অবশ্যই সেটা বেড়ে দাঁড়াবে।