Apr 21, 2017

অদ্রি তলে বসে শিলাখন্ড, বহে অদ্রি ভার

লাইনটি অক্ষয়কুমার বড়ালের মানব বন্দনা কবিতার। আমি অবশ্য কবিতা পড়তে গিয়ে খুঁজে পাইনি এই লাইন। পেয়েছি মুনির হাসান স্যারের লেখা পড়তে পড়তে। হঠাৎ মনে হল, চারপাশটা আমার চেপে আসছে। ছোটখাটো কিছু না, দীর্ঘ সময় ধরে উঁচু উঁচু অদ্রিরা ধেয়ে আসছে, অদ্রির যে বিশালতা সেই বিশালতার প্রতিশব্দ সময়। শিলাখন্ড খুবই অল্প সময়, আমার সময়ও খুব অল্প। আমি হয়ত অদ্রিভার বইতে পারব না, কিন্তু পাষাণচাপা অদ্রিতলেও তো টিকতে পারব না। বাইতে হবে, অদ্রিতল থেকে অদ্রিগাত্রে। আমার সময় হয়ত কম, অদ্রির তো আর কম নয়! বাইতে থাকলে কিছুটি পাব নিশ্চয়ই? না পাইও বা যদি, অন্তত অদ্রিসম-সময়ভারে তো আর মিলিয়ে যাব না।
বইতে থাকুক অদ্রির প্রহরস্রোত, আমি যেন গাইতে থাকি স্রোতের মুখে... 

পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া

লুই আই কানের বিশ্ববিদ্যালয়। কতটা ঘোরা যায় দেখি। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, নিভৃতে অনেক কল্পনা খেলে যায়। পেনের সাইটে দেখি তাদের নামে সৃষ্টির গল্প- Pennovation Works. 
কত সাবলীলতায় Proper Noun হয়ে যাচ্ছে Abstract Noun. 
আমার কাছে প্রশ্ন জাগে, আমরা কতটা SUSTain করব? কে জানে? তবুও ভাবি একদিন বুকে অনেক দম এসে জমবে।

ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম
ডিপার্টমেন্টের কেউ একজন বড়ভাই (ক** চ***) টিএ হিসেবে চান্স পেয়ে গেল, আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  আগস্টে জয়েন, ২২০০০ ডলার বাৎসরিক স্কলারশিপ। কাজের ক্ষেত্র নন লিনিয়ার অপটিক্স। হিসেব রাখি। খায়েশি হিসেব।
এখানটায় একজন প্রিয় লোক আছেন। আমাদের ঘরের ছেলে। বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠাতা। শিক্ষক ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা। প্রফেসর ড. রাগিব হাসান। [স্কলারে] [লিঙ্কডইন]


নিজের ইউনিভার্সিটির সাইট দেখে চোখ সয়ে গেছে। সেরা দশের (USA#4) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটে ঘুরতে গিয়ে যেন বিপদে পড়ে গেলাম। পাতায় পাতায় এত পড়ালেখার কথা কেন? 
কে করে এগুলো? লিডার পেইজে কিনা সাতজন নোবেল লরিয়েটের নাম!
কি আশ্চর্য! আমার দেশের নেতারা তো কখনো নোবেল পাবেন না। যারা পেয়েছেন বা পেতে পারেন তাদের তো আবার আমরা নেতা বলি না! আমাদের নেতারা 'নেতা' আমাদের সংজ্ঞায়! 
তাদের 'নেতা'দের জন্য সংজ্ঞায়ন করতে হয়নি, বিশ্ব মেনে নিয়েছে। 
* সাইটে রিসার্চ সেকশন অবশ্য পাঠ্য। 




Mar 19, 2017

বড় মেশিন গোল সার্ন, কণা ভাঙে খান খান!

সার্নের LHCb ঘোষণা দিল আরো পাঁচটি নতুন কণা আবিষ্কারের খবর!
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যন্ত্র ২৭ কিলোমিটার পরিধির লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে সাতটি পার্টিকেল ডিটেক্টর পয়েন্ট রয়েছে। সাতটির একটি হল LHCb- লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বিউটি।

সার্নের LHCb এর অভ্যন্তরীণ চিত্র


যে পাঁচটি কণা পাওয়া গেছে সেগুলো ওমেগা-সি-জিরোর (Ωc0- প্রতীকটি এখানে লেখা যাচ্ছে না) পাঁচটি উত্তেজিত দশা।
ওমেগা-সি-জিরো একটি ব্যারিয়ন কণা।
ব্যারিয়ন হল হ্যাড্রনের একটা প্রকার, আরেকটা প্রকার হল মেসন।
প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের মহাকর্ষ আর তড়িৎচৌম্বক আমাদের মুখ ও মস্তিষ্কে উজ্জ্বল।
এই যে হ্যাড্রন সাহেবকে নিয়ে আসলাম, উনার কারবার হল সবল নিউক্লিয় বল এবং এর মিথষ্ক্রিয়া নিয়ে। হ্যাড্রনের এক রাস্তা চলে গেছে ব্যারিয়নে। এর মধ্যে ওমেগা ব্যারিয়ন হল ব্যারিয়নের একটা উপরাস্তা আরকি।
ভয়ের কারণ নাই, পথ হারানোর ভয় নাই। জিনিস সোজা।
ব্যারিয়ন একটা যৌগিক কণা- তিনটি কোয়ার্কের সমন্বয়ে এক একটা ব্যারিয়ন গঠিত হয়। আমাদের সবচেয়ে চেনা ব্যারিয়ন হল প্রোটন আর নিউট্রন। স্পষ্টত, প্রোটন আর নিউট্রনও যৌগিক কণা। মৌলিক উপাদান হচ্ছে কোয়ার্ক। :)
কোয়ার্কের ছয়টা সদস্য (এই শেষ, প্রায় ফুরিয়ে এনেছি গিট্টু)
ছয়টা কোয়ার্কের নাম না বললে পাপ হয়ে যাবে।
আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ এবং বটম কোয়ার্ক।
এই ছয়টা কোয়ার্ক থেকে বিভিন্নভাবে তিনটা করে কোয়ার্ক মিলে গঠন করে এক একটা ব্যারিয়ন।
আমাদের ওমেগা-সি-জিরো ব্যারিয়ন কণাটির নাম হচ্ছে চার্ম ওমেগা (Charmed Omega). দুইটা স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক আর একটা চার্ম কোয়ার্ক মিলে গঠন করে একটা চার্ম ওমেগা। যেহেতু এর কোনো নিট আধান নেই তাই এর প্রতীক ওমেগা-সি-জিরো।

পাঁচটি ওমেগা ব্যারিয়ন চিহ্নিতকরণ তথ্যচিত্র
যে পাঁচটি উত্তেজিত দশা পাওয়া গেছে সেগুলোর নাম দেয়া হয়েছে Ωc(3000)0, Ωc(3050)0, Ωc(3066)0, Ωc(3090)0 and Ωc(3119)0. ব্র্যাকেটে দেয়া সংখ্যা MeV সূচক, যে শক্তিমাত্রায় এদের চিহ্নিত করা গেছে। MeV ব্যবহৃত হয় কোন কণার নিশ্চল অবস্থার ভর বোঝাতে। তো কোনটা ভারী, কোনটা হালকা এ ব্যাপারটাও খুব সহজেই বলে দিতে পারবেন এই গোলমেলে লেখাটা থেকেও। MeV যদিও শক্তির একক, আবার কণা পদার্থবিজ্ঞানে High Energy Physics এ কণাদের ভর হয় relativistic ও কণা-তরঙ্গ দ্বৈততার এ এক চমৎকার হিসেব। 
1MeV= 1.602 x 10^-13 জুল। অতএব আলোর বেগের বর্গ দিয়ে ভাগ করলেই চিরপরিভিত কেজি এককে ভর পেয়ে যাবেন। 






:)
বিজ্ঞানীদের পরবর্তী কাজ এদের কোয়ান্টাম নাম্বার বের করা আর অবশ্যই তাত্ত্বিক তাৎপর্য ধরে ফেলা। এর ফলে কোয়ার্ক এবং বহুকোয়ার্ক দশার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক খোলাসা হবে।

Jan 21, 2017

তথ্যসূত্র সংযোজন ইভেন্ট - 1 Librarian 1 Reference

১৫ই জানুয়ারি থেকে আগামী ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছে উইকিপিডিয়ায় তথ্যসূত্র সংযোজন ইভেন্ট



আপনার আমার মত লাখো মানুষের সৃষ্টি বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই বিশ্বকোষের। আগস্ট '১৬ এর হিসেব অনুযায়ী উইকিমিডিয়ার মাসিক পেইজভিউ ১৫.৭ বিলিয়ন। শুধুমাত্র ইংরেজি উইকিপিডিয়ার পেইজভিউ হয়েছে ৭.৮ বিলিয়ন। প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ভাষার ১১,০০০ নিবন্ধ পাতা।
উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ পড়ার সময় আপনারা কোনো কোনো জায়গায় [citation needed] বা [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ট্যাগ দেখে থাকবেন। অর্থাৎ যেখানে কোনো তথ্য বা বর্ণনা প্রদানের পর নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়নি।
যেহেতু শুন্য বাইট থেকে শুরু করে যেকোনো আকারের সম্পাদনাই উইকিপিডিয়াতে হয়ে থাকে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তাই পাঠকেরা যার জানা থাকবে অমুক তথ্যের ব্যাপারে তার তথ্যসূত্র সংযোজনের আশা করা হয়। কারণ, এটি একটি crowdsourcing effort.
লাইব্রেরির সাথে উইকিপিডিয়ার আজীবন সখ্যতা। লাইব্রেরির মানুষগুলোও তাই উইকিপিডিয়ার সখী-সখা। তাদের কাছে তাই আহ্বান যেখানে ট্যাগ দেয়া তথ্য আছে তাদেরকে ধরিয়ে দিন নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের কাছে। :)
এই ইভেন্টটিতে উইকিপিডিয়া লাইব্রেরি তথ্য সংযোজনকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সময় বেঁধেছে। সারা বছরই কাজটা করা যাবে, কিন্তু আগুনে ফুঁ দিয়ে দেয়ার ব্যাপারও তো থাকে। এজন্যই আমরা মানুষেরা বছরজুড়ে নানান দিবস পালন করি।
এই সংশ্লিষ্ট সম্পাদনায় সম্পাদনা সারাংশে #1Lib1Ref হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন।

Nov 7, 2016

৭ম জাতীয় ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের রেজিস্ট্রেশন

মাত্র ছয়দিনে ১ হাজার ৩শ ৮৭টি ছেলেপেলে (মেয়েরাও এর মধ্যে পড়ে) সই করে বসে আছে যে তারা একটা সকাল শীতের কাতরতার আগে বিজ্ঞানের জন্য কাতর হয়ে কাটাবে।
এটা সেটা বিজ্ঞান না, সবচেয়ে বুজুর্গ বিজ্ঞান- পদার্থবিজ্ঞানের জন্য। :D

[যারা জানে না/ এখনও রেজিস্ট্রেশন করে নি তাদের জন্য পোস্ট দিচ্ছি]

আগামী ১৭ই ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ নির্ধারিত স্পটে আঞ্চলিক পর্যায়ের ৭ম পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এর বাছাই অনুষ্ঠিত হবে।

অংশগ্রহণ করা যাবে তিনটি ক্যাটাগরীতে।

এ ক্যাটাগরী: ৭ম-৮ম শ্রেণী
বি ক্যাটাগরী: ৯ম-১০ম শ্রেণী
সি ক্যাটাগরী: ১১শ-১২শ শ্রেণী

১৩৮৭ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মিলে। চট্টগ্রাম অঞ্চল আবার ঢাকা অঞ্চল থেকে তিন ক্যাটাগরীতেই এগিয়ে। ঢাকাকে যেকোনো পর্যায়ে হারিয়ে দেয়া একটা ভালো লক্ষণ। কারণ এই হারটা এক ধরনের জয়। বিজ্ঞানকে পরীক্ষার চেয়ে উৎসব হিসেবে ছড়িয়ে দেয়ার জয়। :)

এবার ইন্দোনেশিয়ায় যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড হতে যাচ্ছে তা ৪৮তম, রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় যে এশিয়ান অলিম্পিয়াড হতে যাচ্ছে তা ১৮তম।
অথচ আমরা যে জাতীয় অলিম্পিয়াড করতে যাচ্ছি তা ৭ম।
এর থেকে একটি সোজাসাপ্টা সত্য হল, বৈশ্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে আমরা এশিয়ানরা কিছুটা পিছিয়ে, আর বাংলাদেশ আরো পিছিয়ে।

"আমরা ইউরোপীয়ানদের চেয়ে বিজ্ঞানে ৫০০ বছর পিছিয়ে"- হয়ত ত্রিশ বছর পর এই একই লাইন মাথায় নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কাউকে ডেকে বলব, ভাই অনেক দিন একটা কটাক্ষ মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আজ সেটা জোকস হয়ে গেছে। আপনি কি শুনবেন?
:) 

সোনার ছেলেরা! সোনার মেয়েরা! তোমাদের চোখে নিয়ে একরাশ স্বপ্ন। :)

লিংক:
http://bdpho.org/

#Physics
#Olympiad
#Registration

Oct 26, 2016

Princeton University Physics Contest 2016

নভেম্বরে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধীনে একটি পদার্থবিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে।
এর দুইটা স্বাদ।
Onsite এবং Online. 



Onsite examটি হবে সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে।
প্রিন্সটনের নিজস্ব ক্যাম্পাসে হবে আর একই সাথে চীন, জার্মানি ও স্লোভাকিয়াতেও নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। Onsite exam এর কথা এমনি বললাম, বলার জন্য বলা। 

Online Exam অনুষ্ঠিত হবে সাত দিনব্যাপী। ১২ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর। দুই ধরনের পরীক্ষাতেই দলগতভাবে অংশগ্রহণ করা যাবে। দল হবে ২-৬ জনের।
তবে শুধু স্কুল ও কলেজের (প্রডিজি! চিয়ার্স :D ) শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সে থাকা কেউ অংশ নিতে পারবেন না।
ব্যবহার করা যাবে WolframAlpha, Mathematica, Matlab, Excel অথবা যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা।
পুনশ্চ: গতবছর পর্যন্ত onsite exam শুধু প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই হত। আইন্সটাইন, ফাইনম্যানের ইউনিভার্সিটি চায় আরো কিছু জায়গায় আয়োজনটা ছড়ানো যাক। সেই খাতিরে এবারে তিনটা স্পট বাড়ানো হয়েছে।
আমাদের দেশে বিজ্ঞানে ভয়ংকর আগ্রহী বাচ্চাকাচ্চাদের একটা প্রজন্ম বড় হচ্ছে। শুধু বয়সে না, আকারেও। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির কথা চিন্তা করে বাঙালি হিসেবে আমি দুইটা চিন্তা করতে পারি।
এক, (টিপিকাল বাঙালিদের মত) ইশ! আমাদের দেশেও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এক সময় তাদের এই আয়োজনটার পাখা ছড়িয়ে দিবে।
দুই, ১৬ কোটির দেশে ৩৭টা গণবিশ্ববিদ্যালয়।
If they can, why can't we?
If not now, so when?
কিসের অভাব আমাদের?
কয়টা দেশের আছে এত মানুষের শক্তি?

Sep 9, 2016

চৌম্বক ক্ষেত্রকে (Magnetic Field ) কেন B সাইন দিয়ে প্রকাশ করা হয়?

Magnetic Field (চৌম্বকক্ষেত্র) কেন B দিয়ে প্রকাশ করা হয়? কে এই প্যাঁচ লাগাল?   


বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক টার্মগুলোকে যখন প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা হয় তখন আমরা ওই টার্মের আদ্যাক্ষর ব্যবহার করে প্রকাশ করতে দেখি। সাধারণত তাই হয়। 

চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতীক প্রদান করেন তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের আবিষ্কর্তা স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল। তড়িৎচুম্বক সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ভেক্টর রাশি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিল ম্যাক্সওয়েলকে। বিভিন্ন সমীকরণে ও ব্যাখায়-বর্ণনায় প্রতীকের সুবিধা আমরা জানি। তড়িৎচুম্বকত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত এমন ৮টি ভেক্টর রাশিকে তিনি alphabetically A থেকে H পর্যন্ত নাম দিয়ে কাজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছিলেন।
এর মধ্যে চৌম্বক ক্ষেত্রকে দিয়েছিলেন B প্রতীক।
পরবর্তীতে এটাই বহুল প্রচলিত হয়ে ব্যবহার হচ্ছে, আর একারণে চৌম্বক ক্ষেত্রের গায়ে প্রতীক হিসেবে B সেঁটে গেছে।
যে ৮টি প্রতীক তিনি ব্যবহার করেছিলেনঃ

* Electromagnetic momentum at a point: A   [ এখন একে বলা হয় vector potential ]
* Magnetic induction(চৌম্বকীয় আবেশ):    B        [ সাধারণত একে magnetic field বলা হয়ে থাকে ]
* Total electric current: C
* Electric displacement: D
* Electromotive force (তড়িচ্চালক বল): E
* Mechanical force: F
* Velocity at a point: G
* Magnetic force: H              [সাধারণত বলা হয়ে থাকে magnetic intensity বা তড়িৎচৌম্বক তীব্রতা ]

A, B, D, F আর H এর ব্যবহার বেঁচে গেছে, গেঁথেও গেছে। কিন্তু, C আর G ম্যাক্সওয়েলকে বিদায় জানিয়েছে! E পরিবর্তিত হয়ে E এর মত আরেক বর্ণ ℰ(curly e) ব্যবহৃত হয় তড়িচ্চালক বলের প্রতীক হিসেবে। এই সুযোগে তড়িৎক্ষেত্রের(Electric Field) একক হয়ে গিয়েছে E.

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের লাভটা কী?

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের লাভটা কী? 
মাত্র এ বছরের শুরুর দিককার খবর- গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ পাওয়া গিয়েছে। ধরে বেধে বলে কয়ে বোঝাতে হবে না এটা যে তাত্ত্বিক আবিষ্কারের একটা প্রমাণ মাত্র। যেহেতু এর ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নাই, অতএব সবাইকে বলে দেবার মত লাভের বিবৃতি আমাদের কাছে নেই। গেল বছর হিগস বোসন কণা পেয়ে গেলাম আমরা, নিউট্রিনোর ভর আছে সে প্রমাণ দিয়ে দিলাম- সবই তো তাত্ত্বিক। কী লাভ?

একশ বছর আগে ফিরে যাই। সারা জাগানিয়া আপেক্ষিক তত্ত্ব, আইনস্টাইন যার কারণে সবচেয়ে বেশি স্মরিত সেজন্য তাকে নোবেলই দেয়া হল না। ১৯২১ এর আগেও কিন্তু আইনস্টাইন নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন কিন্তু জয় পাননি। কারণ, তখন এই তত্ত্বের লাভ জানা ছিল না। তত্ত্বের লাভ জানা কিন্তু আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, লাভ ছাড়া একটা জিনিসের অস্তিত্ব টিকে না। যে বিষয়টার লাভ যত বেশি আর বিস্তৃত সেটি তত স্থায়ী, প্রভাববিস্তারকারী। আমাদের বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ক্ষেত্রেও অমন কথা বলা চলে, তার বোস-আইন্সটাইন কন্ডেন্সেটের জন্য তিনি নোবেল না পেলেও তাঁর কাজের ওপর ভিত্তি করে করা কাজে নোবেল পেয়ে বসে আছেন পদার্থবিজ্ঞানীরা।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কথা বলি। এটাও একশ বছর আগের গল্প, কার্ল ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ আর আরভিন শর্ডিংগার যে তত্ত্বের জন্ম দিলেন তার ব্যবহারিক দিক সম্বন্ধে নিজেরাই ওয়াকিবহাল ছিলেন না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, আপনার পর্যবেক্ষণ পুরোটা কখনোই নিশ্চিত নয়, ফাঁক থাকবেই এর মাঝে। এটা কোনো বোধ, বিজ্ঞানযন্ত্রের সীমা নয় যে আমরা ভুল করব, বরং এর পদার্থবিজ্ঞানটাই এমন যে আমরা পুরোটা জানব না। নিজেদের তত্ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদ্বয়ের অভিমত ছিল যে, তাঁরা কেবল প্রকৃতি কিভাবে কাজ করে, পরমাণুর জগৎটা কেমন তা বের করতেই এটা আবিষ্কার করেছেন, কৌতূহলের কারণে।

১৫০ বছর পেছাই। ১৮৬৪ তে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল যে তাড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ দিলেন , সেটা স্পষ্ট বলে দিল সব তাড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের বেগ আসলে সমান। আরেক কথায় বললে আলো আর তাড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলকে যখন জিজ্ঞেস করা হল এর লাভ কী? তিনি বললেন কোনো লাভ নেই। সমীকরণ। প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন।

কিন্তু ওপরের তত্ত্বগুলো একটিও হারিয়ে যায়নি। পৃথিবীকে আজকের পর্যায়ে আনতে এরা একের পর এক আরো সত্য আর দৃঢ় হয়ে আসন গেড়েছে। লাভ বরং শেষ হচ্ছে না। ম্যাক্সওয়েল যদি আজ এসে দেখতেন তাঁর তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে আমরা পৃথিবীটাকে কী করেছি নিজের অনুমানকেও বিশ্বাস করতেন না।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স হচ্ছে আজকের ইলেকট্রনিক্সের প্রথম নিয়ামক। সেমিকন্ডাকটর, কম্পিউটার , মোবাইল ইত্যাদির পিছনে কাজ করছে এর বিজ্ঞান। ইলেকট্রনকে ব্যবহার করে আমরা যা যা তৈরী করেছি তার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে জানতে হয়েছে। পরমাণুর আচরণ না জানলে আজ হয়ত ভ্যাকুয়াম টিউবের কম্পিউটারে বসে ঘাম ঝরাতে হত।

আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি মহাকর্ষকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেখতে সাহায্য করেছে। স্থান-কালের বক্রতার ধারণাটুকু না থাকলে আজ কৃত্রিম উপগ্রহকে আবিষ্কার করতে পারতাম না। জিপিএস, কৃত্রিম উপগ্রহ, টেলিকমিউনিকেশনের জন্য যে সূক্ষ্ম হিসেবটা লাগে তা আপেক্ষিকতা তত্ত্বের। ওটা ছাড়া সব গোলমেলে হয়ে পড়বে।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার লর্ড কেলভিন যখন বলেছিলেন, বিজ্ঞানের সব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়ে গেছে ঠিক তার পরপরই যেন আরেকটা বিপ্লব ঘটে গেল। কেলভিন ভুল প্রমাণিত হলেন বারবার। আপেক্ষিকতা, তেজস্ক্রিয়তা, নিউক্লিয়ার বল, পরমাণুর গঠন, হাবলের সূত্র, ব্ল্যাক হোল, সিংগুলারিটি, স্ট্রিং থিওরি, হিগস বোসন, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ... একের পর এক আবিষ্কার চলছেই। একটা আবিষ্কার আরো দশটা আবিষ্কারের মূলধন হিসেবে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।

সবই তো তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের যাত্রা কখনো থামবে না। এমন নয় যে আমরা সবকিছু আবিষ্কার করে ফেলব। বরং এ ব্যাপারটির পদার্থবিজ্ঞানটাই এমন যে আমরা ক্রমাগত অনাবিষ্কৃত জগতের দিক আবিষ্কার করতে থাকব। একটি চলমান প্রক্রিয়া।